তাকবিরে তাশরিক কতক্ষণ না পড়লে তাওবা করতে হয়?

তাকবিরে তাশরিক কতক্ষণ না পড়লে তাওবা করতে হয়?

ছবি: সংগৃহীত

জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এই পাঁচদিনকে ইসলামের পরিভাষায় তাশরিকের দিন বলা হয়। এই পাঁচ দিন প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার ‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। এই তাকবিরকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। (হেদায়া: ১/২৭৫)

তাশরিকের দিন শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজরের সময়, শেষ হয় ১৩ জিলহজ আছরের সময়। ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার: ২/১৮০)

ওয়াক্তের ফরজ নামাজ যখন যেভাবেই আদায় করেন, পরক্ষণেই তাকবিরটি বলতে হবে। ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবির পড়ে নেবে। তবে হ্যাঁ, নামাজের বিপরীত কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, যেমন, কথা বলা, নামাজের স্থান থেকে উঠে পড়া ইত্যাদি হলে তাকবির বলতে হবে না, বরং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। (শামি: ৬/১৭৯)

দেখা যাচ্ছে, ভুলে তাকবির না পড়লে নিম্নলিখিত অবস্থায় আর তাকবির বলার সময় থাকে না। ১. মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, ২. নামাজ ভঙ্গ হয়—এমন কোনো কথা বা কাজ করে ফেলা এবং ৩. অজু নষ্ট হয়ে যায়—এমন কোনো কাজ সংঘটিত হওয়া। তখন তাকবির পড়ার সময় বাকি থাকে না। তখন ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। আর নামাজের পর উপরোল্লিখিত কোনো কাজ না করলে বিলম্বে হলেও তাকবিরে তাশরিক পড়ে নিতে পারবে এবং এর দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৭৭-১৭৯; আলবাহরুর রায়েক: ২/১৬৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৫২; আলমাবসুত, সারাখসি: ২/৪৫ ফাতহুল কাদির: ২/৫০)

তাশরিকের দিনগুলোতে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষদের ওপর উচ্চৈঃস্বরে একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। আর নারীরা নিচু স্বরে পড়বে,  যাতে নিজে শোনে। (শামি: ২/১৭৮)

তাকবিরে তাশরিক
ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী করিম (স.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাকবিরে তাশরিকের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং নির্দিষ্ট সময়ে যথানিয়মে তাকবিরটি পড়ার তাওফিক দান করুন। ৯ জিলহজ ফজর থেকে ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর বড়ত্ব, একত্ববাদের ঘোষণা ও প্রশংসাসহ যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।