পাবনায় ঊর্দ্ধমুখী পেঁয়াজের বাজার তদারকিতে অভিযান শুরু

পাবনায় ঊর্দ্ধমুখী পেঁয়াজের বাজার তদারকিতে অভিযান শুরু

পাবনায় পেঁয়াজের বাজার তদারকিতে অভিযানে নেমে মাইকিং করতেছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

পাবনায় ঊর্দ্ধমুখীপেঁয়াজের বাজার তদারকিতে অভিযানে নেমেছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অর্থদন্ড শুরু হয়েছে ব্যবসায়ীদের। পেঁয়াজ বাজারে চলছে তুগলঘীকান্ড। পেঁয়াজ আছে, পেঁয়াজ নেই। এমনটি চলছে এখন পাবনায় পেঁয়াজ বাজারে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ ঘোষণা করে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর পৌঁছাতে না পৌঁছাতে পাবনায় আড়ৎদাররা দেশী পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সোমবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিক্রির জন্য আড়তে রাখা পেঁয়াজ আড়ৎদাররা ৫৬ টাকা দরে  কিনে চার ঘণ্টার মধ্যে কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করে। আবার অনেক আড়ৎদার গায়েব করে পেঁয়াজ। এতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত পাবনায় বৃহস্পতিবার(১৭ সেপ্টেম্বর) বাজারে ৫০/৫৫ টাকার কেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

পাবনা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনার বেড়া, সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়। েেদশে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪১২ টন। এর মধ্যে শুধু পাবনায় উৎপাদন হয় ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৫৮০ টন। এর পরও ৯ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দাম বাড়ার প্রবণতা হলে কৃষকরাও বেশি লাভের আশায় ঘরের মধ্যে মাচা তৈরি করে পেঁয়াজ মজুদ করে রাখেন।

দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজ উদপাদনকারী জেলা পাবনায় এখন লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। পেঁয়াজের রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাবনার হাট বাজার থেকে রাতারাতি যেন পেঁয়াজ উধাও হয়ে গেল। জেলার অন্যতম পেঁয়াজের হাট হাজিরহাট, বনগ্রাম হাট, আতাইকুলা হাট, করমজা হাট, গোড়–লী হাট, সাঁথিয়া হাট, কাশিনাথপুর হাট, ধুলাউড়ি হাটসহ জেলার বড় বড় হাটগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১১০ টাকা দরে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের হাটগুলোতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অথচ ২ দিন আগে (সোমবার) এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ও সিন্ডিকেট রুখতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পাবনা জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে (অতিরিক্ত সচিব) সার্বিক নির্দেশনা ও জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুস সালাম এর নের্তৃত্বে পাবনায় পিঁয়াজে ভান্ডারখ্যাত সুজানগর বাজার ও কাঁচা বাজার এলাকায় পেঁয়াজের আড়তে এবং খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। বাজার স্বাভাবিক রাখতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা। পাবনায় চলতি বছরের আগষ্ট মাসেই পিঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যাবধানেই এমন দাম বাড়ায় হতাশ সাধারণ ক্রেতারা।

পাবনা কাঁচা বাজারে সবজি ব্যাবসায়ী সিদ্দিক বলেন, দুই দিন আগে আমি পাবনার আরিফপুর হাট থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা মণ দরে কৃষকের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনেছি। এখন আমার পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ বা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হবে।

এ বাজারের আরেকজন সবজি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তুফান বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কী করার আছে? আমরা বেশি দামে কিনছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। পাবনায় পেঁয়াজের বড় বাজার বেড়া করমজা হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটে প্রচুর পেঁয়াজ উঠেছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক বড় বড় পাইকার এসেছেন পেঁয়াজ কিনতে।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের মজিদ ব্যাপারী বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকে তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকা দরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ কিনেছেন। এ রকম অনেক পাইকার দাম বাড়ার পরও পেঁয়াজ কিনছেন।

 

 

জেলার একদন্ত হাটের খুচরা সবজি বিক্রেতা করিম হোসেন জানান, “গত ২ দিনে আগেও পোঁজের দাম এত বেশি ছিল না। বুধবার সকালে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজা ২শ’ টাকা দরে। বাধ্য হয়েই আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।”

বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা বললে তারা জানান, পাবনায় এবছর প্রচুর পরিমানে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বন্ধের খবরে এক শ্রেণির ব্যবায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ শুরু করায় হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে। তবে সরকার পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম বাড়বে না। এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।  

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, “সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধ পরিকর। পাবনাতে পেঁয়াজের অভাব নেই। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আসায় মজুদ শুরু করায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি স্বাভাবিক হলে এবং টিসিবি থেকে বিক্রি শুরু আর মূলকাটা পেঁয়াজ পুরাপুরি বাজারে উঠলে দাম কমে যাবে।”

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, পাবনা জেলা বা দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। তাই মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে বাজার মনিটর করা হচ্ছে।