সংগীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ রুনা লায়লার

সংগীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ রুনা লায়লার

ছবিঃ সংগৃহীত।

উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। গান রেকর্ডিংয়ের হিসাবে আজ ২৪ জুন তার সংগীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ হলো। সংগীত ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি।

রুনা লায়লা বলেন, ‘আপনাদের দোয়া, আশীর্বাদ ও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসা, আশীর্বাদ শ্রদ্ধা যেন চিরকাল থাকে আমার সঙ্গে।’এ উপলক্ষে দেশ-বিদেশের তারকারাও রুনা লায়লাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ভাই, মেয়ে ও স্বজনরাও জানিয়েছেন শুভেচ্ছা।

বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর বলেন, ‘রুনা কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। ৬০ বছর টিকে থাকা এরকম সিরিয়াস না হলে, এরকম প্র্যাকটিস না করলে কোনোদিন সম্ভব নয়।’

ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারতীয় শিল্পী সনু নিগাম বলেন, ‘আপনি এত ভালো কলাকার, আপনি এত সুন্দর, আপনার ব্যবহার এত ভালো, আপনার সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। যখন থেকে আমার চোখ খুলেছে, তখন থেকে আপনাকে শুনছি। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। পৃথিবী আপনাকে ভালোবাসে, আমি আপনাকে ভালোবাসি।’

আঁখি আলমগীর বলেন, ‘আমরা অনেক গর্বিত যে আমাদের একজন রুনা লায়লা আছেন।’পাকিস্তানের অভিনেতা ইমরান আব্বাস শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনি বাকি জীবন গাইতে থাকুন, পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করুন। পাকিস্তান থেকে ভালোবাসা জানাই।’

এদিকে চ্যানেল আই সম্মান জানিয়ে দিনটি উদযাপন করেছে। প্রচার করেছে সরাসরি অনুষ্ঠান ‘রুনা লায়লা সংগীত জীবনের ৬০ বছর।’অনুষ্ঠানে ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’ গানটি গেয়ে শোনান এ প্রজন্মের গায়িকা সোমনুর মনির কোনাল। এছাড়া গান করেছেন ইমরান, ঝিলিক, লুইপা, অনিমা মুক্তি, অনন্যা।

অনুষ্ঠানে রুনা লায়লাকে নিয়ে কথা বলেছেন মো. খুরশিদ আলম, কাজী হায়াৎ, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, ওমর সানী, লীনু বিল্লাহ, মানাম আহমেদ, ফুয়াদ নাসের বাবু, শওকত আলী ইমন, মুশফিকুর রহমান গুলজারসহ আরও অনেকে।

মাত্র ১২ বছর বয়সে ‘জুগনু’ সিনেমার ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কী পেয়ারি’ গানটি গাওয়ার মধ্যদিয়ে ১৯৬৪ সালের ২৪ জুন গানে পেশাগতভাবে মনোনিবেশ করেন বাংলাদেশের গর্ব রুনা লায়লা। গানটি লিখেছিলেন তিসনা মেরুতি, কম্পোজ করেছিলেন মানজুর। সেই হিসেবেই আজ তিনি তার সংগীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ করলেন।

এরপর পাকিস্তানের আরও বহু সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন রুনা লায়লা। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘হাম দোনো’, ‘রিশতা হ্যায় পেয়ার কা’, ‘কমান্ডার’, ‘আন্দালিব’, ‘নসীব আপনা আপনা’, ‘দিল অউর দুনিয়া’, ‘উমরাও জান আদা’, ‘আনমোল’, ‘নাদান’, ‘দিলরুবা’সহ আরও বেশকিছু সিনেমা।

মুক্তিযুদ্ধের আগেই রুনা লায়লা প্রথম বাংলাদেশের সিনেমায় প্লেব্যাক করেন ১৯৭০ সালের ২৯ মে মুক্তিপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম পরিচালিত সিনেমা ‘স্বরলিপি’তে। এ সিনেমার ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। গানটি লিখেছিলেন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুর করেছিলেন সুবল দাস। গানে লিপসিং করেছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। প্রথম প্লেব্যাকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেন রুনা লায়লা।

বাংলাদেশের সিনেমার গানেও তার কণ্ঠের কদর বেড়ে যায়। এরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এসে তিনি একে একে ‘জীবন সাথী’, ‘টাকার খেলা’, ‘জিঘাংসা’, ‘আলো তুমি আলেয়া’, ‘লাভ ইন সিমলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘কাজল রেখা’, ‘রং বেরং’, ‘দি রেইন’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘সুন্দরী’, ‘দি ফাদার’, ‘কসাই’, ‘দেবদাস’, ‘চাঁদনী’, ‘দোলনা’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্ধপ্রেম’, ‘দোলা’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘পাঙ্কু জামাই’, ‘দুই দুয়ারী’সহ আরও বহু সিনেমায় তিনি প্লেব্যাক করে শ্রোতাদর্শককে মুগ্ধ করেছেন।

বাংলা ভাষায় তার বহু আধুনিক জনপ্রিয় গানও রয়েছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘পাখি খাঁচা ভেঙ্গে উড়ে গেলে’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’, ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যের আগে’, ‘ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছো প্রাণ’, ‘শেষ করোনা শুরুতে খেলা’ ইত্যাদি।

রুনা লায়লা ‘দি রেইন’, ‘জাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাকসিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেবদাস’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’, ‘তুমি আসবে বলে’ সিনেমাতে প্লেব্যাকের জন্য সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।