হারাম উপার্জনের পরিণতি

হারাম উপার্জনের পরিণতি

ছবি: সংগৃহীত

হারাম উপার্জন জীবন থেকে বরকত তুলে নেয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ (মুসলিম: ১০৫২)

হারাম খেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। রাসুলুল্লাহ (স.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি: ২৯৮৯)

দান-সদকা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু হারাম উপার্জন থেকে দান করলে তা কবুল হয় না। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না।’ (নাসায়ি: ১৩৯)

সুদ ঘুষ ইত্যাদি হারাম উপার্জন। সুদ ও ঘুষের সঙ্গে জড়িত সবার উপর আল্লাহর রাসুলের অভিশাপ রয়েছে। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (স.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, এরা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম: ৩৯৮৫)
ঘুষের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকারীদের ব্যাপারে রাসুল (স.) বলেছেন, ঘুষদাতা ও গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। (ইবনে মাজাহ: ২৩১৩)

আল্লাহ তাআলা হারাম উপার্জনকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও। অতঃপর যদি তোমরা না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও...। ’ (সুরা বাকারা:২৭৮-২৭৯)

হারাম উপার্জনের কারণে শুধু দুনিয়াতে শাস্তি দেওয়া হয় না; আখেরাতেও রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খণ্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কে? সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর। ’ (বুখারি: ২০৮৫)

অতএব, আমাদের উচিত, হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকা। কারণ এর দ্বারা সাময়িক সচ্ছলতা অর্জিত হলেও এর ক্ষতি চিরস্থায়ী। মহান আল্লাহ আমাদের হারাম থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।