এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার সাড়ে ৫ হাজার ছাড়াল

এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার সাড়ে ৫ হাজার ছাড়াল

প্রতীকী ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় দেশব্যাপী চলছে যৌথ অভিযান। কোথাও কোথাও চলছে ব্লক রেইড। মহানগর থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। আর মামলা হচ্ছে একের পর এক।

এ পর্যন্ত ঢাকায় দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি মামলা। যাতে ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। অপরদিকে দেশজুড়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় রাজধানীসহ আরও কয়েকটি জেলায় কমপক্ষে ৭৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত সাত দিনে সারাদেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীসহ ৫ হাজার ৫২২ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ডিএমপি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ঢাকায় বিভিন্ন থানায় সহিংসতা, ভাঙচুর এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থানে আগুনের ঘটনায় ২০৯টি মামলার বিপরীতে ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল গ্রেপ্তার করেছে ১৪৮ জনকে।

গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) হারুন অর রশিদ জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়ায় দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় ডেমরা থানা শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। ভিডিও বিশ্লেষণ করে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, ধরপাকড়ে সাধারণ মানুষকেও গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী অনেকের দাবি, সহিংসতার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও আটকের পর টাকা চাওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে দেওয়া হচ্ছে মামলা।

ছয় মাসের শিশুকে নিয়ে আদালত পাড়ায় ঘুরছিলেন আলো আক্তার নামে এক নারী। তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামী রনি পেশায় একজন পিকআপচালক। তিনি বাজার করতে বের হলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। স্বামীকে ছাড়াতে পুলিশকে টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ টাকা নিয়েও ছাড়েনি রনিকে।

রাজধানীর তেজগাঁও থেকে গত বুধবার বিকেলে গ্রেপ্তার হোন ভ্যানচালক মো. হুমায়ুন কবির মোল্লাকে (৪২)। স্বামীর জামিনের বিষয়ে আদালতে আসেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তার অভিযোগ, হুমায়ুন কবির কারওয়ানবাজার মাছের আড়তে ভ্যানচালান। ২৫ জুলাই ভ্যান সারাতে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

ফাতেমা বেগম বলেন, আমরা দিন এনে দিন খায়। আমার স্বামী কী রাজনীতি করবেন? তার কী অপরাধ? কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনো কথাই শুনলো না।

একই অবস্থা জুস কোম্পানির কর্মচারী মো. হাসান, ড্রাইভার মো. আবুল কালামসহ অনেকের। তাদের পরিবারের অভিযোগ, সহিংসতায় জড়িত না থাকলেও তাদের ধরে এনে দেওয়া হচ্ছে মামলা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে বা এলাকার লোকজন যাদের দেখেছে, তাদেরকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের অভিযানে নিরপরাধ মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।