কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গ্রেপ্তার আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী
প্রতীকী ছবি
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হওয়া বিভিন্ন মামলায় শিক্ষার্থীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত ১৬ জুলাই থেকে রোববার পর্যন্ত সবশেষ ১২ দিনে ঢাকাসহ দেশের ১৮টি জেলায় আড়াইশোর বেশি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীও আছে।
গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জন ছাত্রশিবিরের এবং ৮ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, সহিংসতার ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদেরই কেবল গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সহিংস বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধী সনাক্তের পর গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় রোববার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা (মহানগর) থেকে ১৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর বাইরে কুষ্টিয়ায় ২০, সিলেটে ১৬, বগুড়ায় ৮, মাদারীপুরে ১৫, রাজশাহীতে ১০, মাগুরায় ৬, সাতক্ষীরায় ৫, মৌলভীবাজারে ২, জামালপুরে ৪, ঢাকা জেলায় (মহানগরের বাইরে) ৬, নওগাঁয় ৪, জয়পুরহাটে ৪, নীলফামারীতে ৩, সুনামগঞ্জে ২, ফরিদপুরে ৩, চুয়াডাঙ্গায় ১ ও নারায়ণগঞ্জে ২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে চট্টগ্রামে। মহানগর ও জেলা মিলে অন্তত ১২৬ শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা, সোবহানিয়া আলিয়া মাদরাসা ও তানজীমুল উম্মাম মাদরাসার শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাকে ১৯ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রমজান শেখকে। পুলিশের উপস্থিতিতে আদালত প্রাঙ্গণে তিনি বলেন, কারাগারে তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন।
চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ধনিয়ালা পাড়ায় অবস্থিত বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার ১৩ শিক্ষার্থীকে ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের একজন আজিজ উল্লাহ কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তার বড় ভাই শিক্ষানবিশ আইনজীবী হাফিজ উল্লাহ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, তার ভাই কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষে আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিলে পড়ছেন। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো, বুঝতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, মামলায় কোনো শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়নি। ঘটনায় জড়িত শুধু প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিরীহ কাউকে পুলিশ ধরছে না। এরপরও তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হবে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে কমপক্ষে ১৬টি মামলায় শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলায় আসামিদের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীর নাম এবং তারা কে কোন বিভাগে পড়েন, সেটি উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া রাজধানীর রূপনগর থানায় পৃথক দুটি মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীসহ এক থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া থানার আরেকটি মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতনামা ছাত্রছাত্রীদের আসামি করা হয়েছে।
এর বাইরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ১১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সবকটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারীদের আসামি করা হয়েছে।