শিশু ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ভুল হয়েছে: হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ

শিশু ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া ভুল হয়েছে: হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ

ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার ১৭ বছরের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া এবং হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করায় শিশু আইনের ব্যত্যয় হয়েছে এবং বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। সরকার পদক্ষেপ নিবে যাতে এ রকম ভুল না হয়। তার রিমান্ড বাতিল করা হয়েছে এবং কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করায় আদালত এ বিষয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে আদেশ দেন।

শুনানিতে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর আদালতে বলেছেন, তাকে রিমান্ডে নেওয়া ও কোমরে দড়ি পরানোর বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিবে যাতে এ রকম ভুল না হয়। রিমান্ড বাতিল করা হয়েছে। তার রিমান্ড বাতিল করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আপনারা আবেদনের ওপর একটি পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন।

এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, রুল দিলে এটা আরো সমস্যা হতে পারে।

আদালত আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে আদেশ দেন।

বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকার ও বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আইন লঙ্ঘন করে ফাইয়াজকে দড়ি বেধে পুলিশ ভ্যানে তোলা এবং রিমান্ডে নেওয়ার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিট আবেদন শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ।

রোববার (২৮ জুলাই) ১৭ বছরের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদকে উদ্দেশ্যে বলেন, রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ফাইয়াজের বাবা-মাকে খুজে বের করে তার জামিনের বিষয়ে দরখাস্ত দাখিল করতে বলেন। আদালত আরও বলেন, বাচ্চা ছেলে। আপনার বাচ্চা হলে কি করতেন?

আদালত অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেটিকে আজকে সন্ধ্যার মধ্যে বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, সে বাবা-মার কাছে থাকবে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, ওই শিশুটিকে রিমান্ডে নেয়া হবে না। তার পরিবার আদালতে জামিন আবেদন নিয়ে গেলে তা বিবেচনা করা হবে। আর এক্ষেত্রে শিশু আইন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হাইকোর্ট বলেন, আমরা টিভি চ্যানেলে দেখেছি, তার বাবা সব ডকুমেন্টস দেখিয়েছে যে ছেলেটির বয়স ১৭। কিন্তু তা ম্যাজিস্ট্রেট বিবেচনা (কনসিডার) করেনি। কাজ একটা করে তা হালাল করার জন্য জেদাজেদি করবেন? বিষয়গুলো যেন এমন না হয়।

এ সময় আদালত বলেন, ঠিক আছে অনেক ধ্বংস যজ্ঞ হয়েছে, কিন্তু এমন ২/১ ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিচারকের এমন অপকর্মের কারণে বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলেও মনে করেন আদালত।

এ বিষয়ে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দেখে, যে একজন শিশুকে এভাবে দড়ি বেধে পুলিশ ভ্যানে তুলছে, এটি দেখে সকাল বেলাই আমরা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন, পিটিশন আকারে নিয়ে যেতে। পিটিশন নিয়ে গেলাম। শিশু আইন ২০১৩ যেটি আছে, এই আইনের কতগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। কাউকে যদি গ্রেপ্তার করতে হয় তাহলে পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি কিনা। রিমান্ডের বিষয়ে অনেক নিয়ম আছে। আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনো শিশুকে হাতকড়া পড়ানো যাবে না।

শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফাইয়াজের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।

জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। বর্তমানে ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়। মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর। গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদাপোশাকে একদল লোকজন এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায় বলে জানান তার পরিবার।

রিমান্ডের আদেশের বিষয়ে ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে, ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং মামলাটি শিশু আদালতে প্রেরণের আবেদন করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করে শিশুটিকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন।