ডলারের দাম বেড়ে ১২৪ টাকা

ডলারের দাম বেড়ে ১২৪ টাকা

ছবি: সংগৃহীত

খোলাবাজারে মা‌র্কিন ডলারের দাম বেড়ে ১২৪ টাকায় উঠেছে। রে‌মিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রভাবে এ দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর ম‌তি‌ঝিল দিলকুশা এলাকায় বি‌ভিন্ন মা‌নি চেঞ্জার হাউজে খোঁজ নি‌য়ে এমন তথ্য জানা গে‌ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের জুলাইয়ে   রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তির কথা বলে প্রতিবাদ হিসাবে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। ফ‌লে রে‌মিট্যান্স প্রবাহ ক‌মে গে‌ছে। যার প্রভাব প‌ড়ে‌ছে খোলা বাজা‌রে।

যে কারণে একদিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। এখন এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১২৪ থেকে ১২৪ টাকা ২০ পয়সা। ‌গত রোববার ও সোমবারও খোলাবাজারে ডলার ১২১ থে‌কে ১২২ টাকায় বি‌ক্রি হ‌য়ে‌ছে।

রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা হারুন জানান, থাইল্যান্ড যাব। খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে মানি চেঞ্জারে এসেছি। কিন্ত ডলার ১২৪ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই রে‌টেই কিনলাম। কারণ শুনলাম দাম আরো বে‌ড়ে যা‌বে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটা বাড়তে শুরু ক‌রে‌ছে।

এদি‌কে, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির একজন প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর রোববার বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ১২টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা ৭০ পয়সা অফার করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি জানান, গত এক সপ্তাহ দেশে ইন্টারনেট ছিল না। ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম হয়নি। সারা বিশ্বের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন প্রায় বন্ধ ছিল। তাই রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাই ডলারের রেট বাড়িয়ে দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ১ থেকে ১৮ জুলাই এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার; অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাব বলছে ১৯ থেকে ২৪ জুলাই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এর আগে ডলারের দাম বাড়ানোর পর গত মে মাসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে; একক মাস হিসেবে যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে জুন মাসে। 

গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ পরবর্তীতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘিরে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১৫০ জন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের হিসাবে দুই শতাধিক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।