আজ সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা আইজিপির

আজ সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা আইজিপির

ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ঢাকার থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর শুধু থানা নয়, পুলিশের সব ইউনিটই ফাঁকা হয়ে যায়। আত্মগোপনে থাকা পুলিশ সদস্যদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে নিজ নিজ ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম।

বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেল ৪টায় পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে সব ইউনিটের সদস্যকে কাজে যোগদান করতে নির্দেশ দেন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম।

নির্দেশনায় বলা হয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইসন্স, পিওএম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএনস), সব মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইনস, অন্যান্য পুলিশ স্থাপনাসহ বিশেষায়িত সব পুলিশ ইউনিটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোর্সের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্সকে স্ব স্ব ইউনিটের পুলিশ লাইনসে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপারেশনস কন্ট্রোল রুম সক্রিয় করা, দায়িত্ব বণ্টন করা এবং সারাদেশের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফোর্সের মনোবল বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের দাফন/সৎকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।

আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, আশা করছি, অচিরেই এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সবার সহযোগিতা আহ্বান করেন তিনি। থানাগুলোকে ঠিকঠাক করতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সচেতন মানুষ, সাংবাদিকসহ সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি করার নির্দেশ দেন আইজিপি। সামাজিকমাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত বা অ্যাসোসিয়েশনের নামে কোনো ধরনের বিবৃতি, ব্যাজের ছবি বা কোনো ধরনের মন্তব্য করতেও নিষেধ করেছেন ময়নুল ইসলাম।

পুলিশপ্রধান মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই রাষ্ট্রের মূল শক্তি। তাই আমরা সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর।

আইজিপি বলেন, আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে; কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত ও নিগৃহীত হয়েছেন। এই সন্ধিক্ষণে আমি সব পুলিশ সদস্যকে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই, আপনারা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করুন। আপনাদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।’

সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বলেন, এক বিশেষ পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সম্মুখে হাজির হয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বন্ধপরিকর। পারস্পরিক সৌহার্দ, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব।

 

এর আগে, সরকার পতনের পর সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল থেকে দেশের অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। এরপর রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে।