দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন: মির্জা ফখরুল

দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতের দিল্লিতে বসে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। যখন তারা মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারে না, তখন আমাদের হিন্দু ভাইদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এটা তাদের অপচেষ্টা, কৌশল কিংবা খেলা।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যখন আওয়ামী লীগ সমস্ত খেলায় পরাজিত হবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, তখন তারা বলবে হিন্দু ভাইদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আপনারা জানেন বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একটি গাছে ফুলের মতো ফুটে রয়েছে। আমাদের এ সম্পর্কের মধ্যে তারা ফাটল ধরাতে চায়। আওয়ামী লীগ এগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়।

তিনি বলেন, আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, যখন কোনো রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তখন একটা গোলযোগ হয়, সেই গণ্ডগোলটা কখনও ধর্মীয় নয়, সেটা রাজনৈতিক। আমরা সবসময় হিন্দু ভাইদের ভোট পেয়েছি, তাহলে আমরা তাদের কেন আলাদা ভাবব।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপির ৭০০ নেতা গুম সর্বাধিক নেতাকে গুলি করে হত্যা এবং ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। জনগণের ওপর অন্যায়-অত্যাচার আর দেশের সম্পদ লুটপাটকারী এই দলের নেতাদের এখন পালাবার পথ হারিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

 

মির্জা ফখরুল সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। যদি কেউ সংখ্যালঘু পরিবারের প্রতি অন্যায় অবিচার করে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়াও কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন প্রায় ১৫ বছর আমরা একটা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, ভয়াবহ নির্যাতনকারী শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত-নিপীড়িত। আমাদের প্রায় ৭০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। প্রায় হাজারখানেক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহকে অস্বীকার করে জনগণের ওপর যে অত্যাচার করেছে, আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে, আলেম-ওলামাদের ফাঁসি পর্যন্ত দিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের দিনের পর দিন কারাগারে রেখেছে, আমিও কারাগারে ছিলাম অনেক দিন। তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি পালিয়ে যেতে হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এখন আশ্রয় নিয়েছে দিল্লিতে। ব্রিটেন অস্বীকার করেছে, আমেরিকা বলেছে নেবে না। এখন পর্যন্ত ভারতও অফিসিয়ালি আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি, এখন পর্যন্ত তিনি সেখানে আছেন। যখন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন আর মানুষ থেমে থাকে না।

ফখরুল বলেন, হাসিনা সরকার ৯১ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা নেই। এই টাকাগুলো তারা বিদেশে পাচার করেছে, আর কিছু টাকা বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কাজে ব্যবহার করছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশ রক্ষায় ছাত্র ভাইদেরকে, যারা এই দেশকে রক্ষা করেছে। সেই সাথে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। যারা প্রয়োজনের মধ্যে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়।

সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার প্যারিস, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস, স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানা, গড়েয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেদওয়ানুল হক রেদো শাহ সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

পরে সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ঐক্য ও সম্প্রীতির জনসভায় যোগ দেন বিএনপির মহাসচিব।