সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুমিনের ভূমিকা

সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুমিনের ভূমিকা

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ ছাড়া মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই সমাজকে ভালো রাখা, শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করা ওই সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। সমাজে শান্তি না থাকলে, দ্বন্দ্ব ও হানাহাানি থাকলে সমাজের কেউ শান্তিতে শান্তিতে থাকতে পারে না। দুই দলের দ্বন্দ্বের কারণে তো বটেই দুই ব্যক্তির দ্বন্দ্বের কারণেও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সবার শান্তি ও নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে।

তাই মুমিনের কর্তব্য মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। মানুষের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। মুমিনদের দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে তাদের মধ্যে ন্যায়ের ভিত্তিতে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, যদি মুমিনদের দুই দল লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং ইনসাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। (সুরা হুজুরাত: ৯, ১০)

মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক করার এবং বিবাদ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পারস্পরিক সম্পর্ক সঠিকরূপে গড়ে নাও। আর আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা আনফাল: ১)

যে ব্যক্তি বা দল আল্লাহর ভয়ে ও তার সন্তুষ্টির জন্য মুমিনদের মধ্যে আপস-মিমাংসার জন্য কাজ করে, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। (সুরা হুজুরাত: ১০)

মুসলমানদের সমাজ ও রাষ্ট্রে দ্বন্দ্ব, হানাহানি, অনৈক্য ও বিভাজন থাকলে সব মুসলমানদেরই ক্ষতি হয়। সামগ্রিকভাবে মুসলমানরা দুর্বল হয়। বহিঃশক্তি নাক গলায়, সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তাই আল্লাহর নির্দেশ হলো, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সুরা আনফাল: ৪৬)

মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা, বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করা প্রতিটি দায়িত্ববান, বিবেকবান মুসলমানের কর্তব্য। কেউ কারো ওপর জুলুম ও বাড়াবাড়ি করলে তার বিরোধিতা করতে হবে। ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে। অন্যায়ের সহযোগী হওয়া হওয়া যাবে না। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তি হতে হবে ন্যায় ও ইনসাফ। আল্লাহ তাআলা বলেন, সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। (সুরা মায়েদা: ২)

নিজের ভাই, বন্ধু যদি জুলুম করে তাহলে তাকে বাঁধা দেওয়া, জুলুম থেকে বিরত করা আবশ্যক। জালিম অবস্থায় মুসলমান ভাইকে বাধা দেওয়াই তার সহযোগিতা গণ্য হয়। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বললেন, অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (সহিহ বুখারি: ২৪৪৩, সহিহ মুসলিম: ২৫৮৪)