খেজুর খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা

খেজুর খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা

ছবিঃ সংগৃহিত।

আমাদের দেশে রমজান মাসে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙার চল আছে। তবে সারা বছরই আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই ফল। খেজুর শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও অনেক। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে খেজুর সুপারফুড। যাঁরা প্রক্রিয়াজাত চিনি বা মিষ্টি খেতে অনিচ্ছুক, তাঁদের জন্য খেজুর সেরা বিকল্প। মাত্র এক সপ্তাহ দুটি করে খেজুর খেয়েই আপনি নিজের শরীরে আশ্চর্য পরিবর্তন লক্ষ করতে পারবেন। কী সেগুলো? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

. শক্তি পাবেন

খেজুরের ৯৮ শতাংশই শর্করা। প্রতিটি খেজুরে প্রায় ৬৬ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। আমরা অনেকেই শারীরিক বা মস্তিষ্কজনিত পরিশ্রমের কারণে দুপুরের পরপরই ক্লান্ত হয়ে যাই। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড, সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, খেজুর খেলে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি মেলে।

. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে

খেজুরে ফ্যাট নেই বললেই চলে। খেজুর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হয়। আবার হার্টের সমস্যায় ভোগার আশঙ্কাও কমে।

. হজমের সমস্যা দূর হবে

খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টি উপাদান আর আঁশ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। খেজুর বদহজম রোধ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনো কখনো ডায়রিয়ার জন্যও এটা উপকারী।

. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে

আমরা প্রতিদিন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লবণ তথা সোডিয়াম গ্রহণ করি। ফলে সহজেই রক্তচাপ বেড়ে যায়। খেজুরে সোডিয়াম থাকে না। বরং পটাশিয়াম থাকে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

. চোখ ভালো রাখবে

খেজুরে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। বিশেষ করে এতে ই-১, ই-২, ই-৩, ই-৫ ও ভিটামিন সি রয়েছে। খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।

খেজুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর। খেজুরে অবস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে

মাত্র কয়েকটি খেজুর কমিয়ে দেয় ক্ষুধার জ্বালা। পাকস্থলীকেও কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। কয়েকটা খেজুর কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়। আবার ভালো পরিমাণে ক্যালরি থাকায় শরীরকে কর্মক্ষম ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে কঠিন পরিশ্রমের সময় এবং সারা দিন না খেয়ে থাকার পর চারটি খেজুর শরীরে পরিপূর্ণ শক্তি এনে দেয়।

. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াবে

খেজুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর। খেজুরে অবস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

. হাড় দাঁত ভালো রাখে

খেজুরে ক্যালসিয়াম আছে ৬৩ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। ফলে খেজুর খেলে হাড় মজবুত হয়। এ ছাড়া খেজুর শিশুদের দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।

. ত্বক চুল ভালো থাকে

খেজুরের ভিটামিন, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বক ও চুল ভালো রাখতে খুবই সহায়ক। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। ত্বকের নানা সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় খেজুর। ত্বকের বলিরেখা নিয়ন্ত্রণ করতেও খেজুর উপকারী।

১০. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন খেজুর খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়বে। নিয়মিত খেলে সৃজনশীলতা বাড়বে, নতুন কিছু শেখাও সহজ হবে।

কখন, কীভাবে খাবেন

প্রতিদিন মাত্র দুটি খেজুর খেলেই আপনি ওপরের সুবিধাগুলো পাবেন। সকালের নাস্তায় দুটি খেজুর খেতে পারেন। ওটস বা স্মুদির সঙ্গে মিলিয়েও খেতে পারেন। আবার সকাল ও দুপুরের খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে খেতে পারেন। খেতে পারেন খেজুরের মিল্কশেক। দুটি মিলের মাঝের বিরতিতে খিদে পেলে বাদাম, সালাদ বা কয়েকটি ফলের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন খেজুর। তবে সকালে খেজুর খেলে সারা দিন তা আপনাকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে।

সতর্কতা

খেজুরের সঙ্গে যদি চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, তেল–চর্বিজাতীয় খাবার খান, তাহলে এই সুফল পাবেন না। ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ৩২৪ কিলোক্যালরি। এটি ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিকসমৃদ্ধ। তাই খেজুর খেলে অন্যান্য শর্করাজাতীয় খাবারের চাহিদা কমে যায়। শর্করাজাতীয় খাবার ওজন, শারীরিক অবস্থা, জীবনযাপন—বুঝে খাবেন। যাঁদের ডায়াবেটিস ও কিডনিজনিত সমস্যা আছে, তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাবেন।

সূত্র: ব্রাইট সাইডের ইউটিউব চ্যানেল