জীবনমুখী গানের এক আপোষহীন কাণ্ডারী নচিকেতা

জীবনমুখী গানের এক আপোষহীন কাণ্ডারী নচিকেতা

ছবি: সংগৃহীত

নব্বই দশকের শুরু থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গীতপ্রেমী বাঙালিরা পেয়েছেন জীবনবোধের স্বাদ। তারা জেনেছেন অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন। শুধু তাই নয়, যখন সময় থমকে দাঁড়ায় তখন মানুষের কি করার আছে, তাও জানা গেছে গানের মাধ্যমে। স্বপ্ন-স্বপ্ন-স্বপ্ন, স্বপ্ন দেখে মন। জীবনের হাজার গল্প, প্রেম-বিচ্ছেদ, সমাজের অসামাজিকতা, নষ্ট ও পচা আচরণ, সবকিছুকে সঙ্গে নিয়েই স্বপ্ন দেখা যায় এই কথাটি যিনি বারবার বলেছেন তিনি জীবনমুখী বাংলা গানের অন্যতম স্রষ্টা নচিকেতা চক্রবর্তী। শত দুঃখ-দুর্দশা-ক্লান্তির ভেতরে থাকা বাঙালিকে বলতে শিখিয়েছেন ‘এই বেশ ভালো আছি!’ বলার।

গানকে তিনি পেশা হিসেবে নিয়েছেন তার কারণ বলতে একটুও দ্বিধা করেননি। নচিকেতা বলেছেন, জীবিকার প্রয়োজনে একজন শ্রমিক হাতুড়ি কেনে, একজন রাজনীতিবিদ মিথ্যে কেনে। আমার কাছে গান ছাড়া আর কিছু নেই।

তিনি ১৯৬৫ সালের আজ (১ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা যেন জুড়ে আছে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এ শহর তার গান, ভাবনা, আক্ষেপ ও তৃপ্তির জায়গা। তবুও আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন, ৩১ বছর যে বাঙালির জন্য নিজেকে সঁপে দিলাম, সেই বাঙালিই আজ আমাকে ট্রোল করছে! আমি সত্যিই দুঃখ পেয়েছি।

আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদে সরব পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষ করে কলকাতার শোবিজ তারকারা তো প্রতিদিন বিচার দাবি করে রাস্তায় নামছেন। তবে অনেক তারকা প্রতিবাদ করেও হচ্ছেন কটাক্ষের শিকার। সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী ও প্রতিবাদে নেমে হচ্ছে ট্রোলের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত বহু কালজয়ী গানের এই শিল্পী।

১৪ আগস্ট আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের লেখা একটি কবিতা পাঠ করেন নচিকেতা। ‘মা তুমি এসো না’ নামের কবিতা ছড়িয়ে পড়তেই শিল্পীকে নিয়ে শুরু হয় ট্রোল।

বিষয়টি নিয়ে হতাশার কথাই বলেছেন নচিকেতা। তিনি বললেন, প্রথম প্রতিবাদ তো আমিই করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, কারো পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ না করলে ট্রোলিং শুরু হবে!

প্রতিবাদ, ন্যায়-অন্যায়ে সত্যের পক্ষে আপোষহীন নচিকেতা চক্রবর্তী। গানের সঙ্গে লেখালেখিতে দারুণ আগ্রহ তার। তাই তো জেল খাটতে হয়েছে এই শিল্পীকে। তিনি লিখেছেন, আজকে যিনি কয়লা মন্ত্রী, কালকে দেখেন শিক্ষা/ তাই কয়লা কালো শিক্ষা নিয়ে মানুষ করছে ভিক্ষা।’

নচিকেতার প্রায় সব গান লিখেছেন নিজেই। তার গানের চরিত্ররা আমাদের ভেতরে অবস্থান করছে। তুমুল প্রেমের নীলাঞ্জনা, মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত কর্পোরেট জীবন বয়ে চলা পড়ন্ত বিকেলের এক দীর্ঘশ্বাস অনির্বাণ, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করা ‘সরকারি কর্মচারী’ থেকে শুরু করে অজস্র চরিত্র খুব যত্নে তিনি এঁকেছেন সুরের ক্যানভাসে।

উত্তর কলকাতার মণীন্দ্র কলেজে পড়া অবস্থায় ১৯৯৩ সালে গানপাগল নচিকেতা প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়। তার গাওয়া অজস্র গানের ভেতরে নিজের প্রিয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন ‘নীলাঞ্জনা’ সিরিজের ৩য় খণ্ডকে। তবে নীলাঞ্জনা কি সত্যিই তার প্রথম প্রেম? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি কখনোই কিছু বলেননি। রেখে দিয়েছেন রহস্যটাকেই জিইয়ে।