ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক বন্ধন

ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক বন্ধন

ছবিঃ সংগৃহিত।

মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ কখনো চলতে পারে না। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে একা থাকতে দেওয়া হয়নি বরং মা হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করে তাঁর সঙ্গে একত্রে বসবাস করতে দেওয়া হয়েছিল। হজরত আদম (আ.)-এর জোড় সৃষ্টি করে আল্লাহ তাঁকে বলেছিলেন, হে আদম! তুমি তোমার জোড় স্ত্রীসহ জান্নাতে বসবাস কর। সুরা বাকারা, আয়াত ৩৫।

হজরত আদম হাওয়া (আ.) থেকে আল্লাহতায়ালা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব মানব-মানবী। মানব জাতির আরবি প্রতিশব্দ ইনসানের মূলধাতু উনসুন মানে মনের আকর্ষণ, মেলামেশা, ভালোবাসা। মানুষের স্বভাব হলো অন্য মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা তথা সমাজবদ্ধভাবে জীবনযাপন করা। জীবনধারণের জন্য অন্যের সহযোগিতা অতীব প্রয়োজন। নিজের, নিজ পরিবার-পরিজনের, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা ও কল্যাণসাধন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীরই কর্তব্য। ইসলামে হক্কুল ইবাদ তথা অন্যের প্রতি কর্তব্য পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম শুধু নিজের বা নিজ পরিবারের আরাম -আয়েশ করার অধিকার কোনো মুসলমানকে দেওয়া হয়নি বরং তার আনন্দ-বেদনা, সুখানুভূতি ও তার সম্পদে রয়েছে প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখী মানুষের অংশ ও প্রাপ্য অধিকার। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ সুরা রুম, আয়াত ২১।

ইসলামে বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি! তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০। প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের কল্যাণ সাধন করবে। কেউ যেন কষ্ট না পায়, কারও প্রতি কোনো জুলুম যেন না হয়, মজলুমকে সাহায্য করা এবং জালিমকে বাধা দেওয়া, সবাই মিলেমিশে থাকা ইমানি দায়িত্ব।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের প্রতি দয়া করে না আর আমাদের বড়দের সম্মান করে না, সে মুসলিম দলভুক্ত নয়।’ তিরমিজি। একজন মুমিন নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, অন্যের জন্যও তা-ই পছন্দ করবে। নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী এবং সাথিসঙ্গীদের সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যবহার করবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি ইমানদার নয় যে তৃপ্তিসহ খায় অথচ তার প্রতিবেশী তার পাশে অভুক্ত থাকে।’ বায়হাকি।

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, অধীনদের প্রতি ভালো ব্যবহার, এতিম, দুস্থ-অসহায়, নারী-পুরুষ অমুসলিমদের সঙ্গে সম্প্রীতির নির্দেশ দেয়। পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম করা, আপস-মীমাংসা করা, হাদিয়া আদান-প্রদান, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা, কাউকে উপহাস, দোষারোপ না করা, মন্দনামে না ডাকা, কারও গিবত- পরনিন্দা না করা, অপবাদ না দেওয়া, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, ঠকানো ইত্যাদি থেকে বিরত থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, স্ত্রী-সন্তান তথা চারপাশের সবার সঙ্গে হালাল পথে চলে হারাম, অন্যায়কে বর্জন করে সুন্দরভাবে আল্লাহর নির্দেশনা, প্রিয় নবী (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ আমলের মাধ্যমে জীবনযাপন করাই ইসলামের সামাজিক বিধান। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন।