রিজিক সংকীর্ণ হয় যেসব কারণে

রিজিক সংকীর্ণ হয় যেসব কারণে

প্রতীকী ছবি।

রিজিক আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ জীবিকা, খাদ্য। তবে রিজিকের অর্থ আরও ব্যাপক। ভাত-রুটি যেমন রিজিক তেমনি সুস্থতাও মহান আল্লাহ প্রদত্ত এক মহা রিজিক। ভালো কাজকর্মে যেমনিভাবে মহান আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন তেমনিভাবে কিছু কিছু কাজের কারণে মহান আল্লাহ বান্দার রিজিক সংকীর্ণ করে দেন। রিজিক সংকীর্ণ হওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো।

পাপকাজে লিপ্ত হওয়া : ভালো ও নেক কাজে মহান আল্লাহ খুশি হোন। আর বদ ও মন্দ কাজে মহান আল্লাহ রাগান্বিত হন। শুধু রাগান্বিতই হোন না, বরং বান্দার রিজিকও সংকীর্ণ করে দেন। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সৎকর্ম ব্যতীত অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ব্যতীত অন্য কিছুতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০২২)

শুকরিয়া আদায় না করা : প্রত্যেক মানুষ মহান আল্লাহর অফুরান নেয়ামতে ডুবে আছে। সেসব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা মানুষের ওপর আবশ্যক। শুকরিয়া আদায় করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়। আর শুকরিয়া আদায় না করলে রিজিক সংকীর্ণ হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও বেশি দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠোর।’ (সুরা ইব্রাহিম ৭)

হারাম উপার্জন করা : হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এই পৃথিবীর ধন-দৌলত সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎভাবে ব্যয় করবে, তা তার খুবই উপকারী হবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করবে, সে ওই ব্যক্তির মতো যে খেতে থাকে কিন্তু পরিতৃপ্ত হয় না।’ (সহিহ বোখারি ৬৪২৭)

জাকাত আদায় না করা : জাকাত শরিয়তের একটি রুকন এবং অর্জিত সম্পদের পবিত্রতা। জাকাত গরিব ও অসহায় মানুষের হক। তাই কোরআনের একাধিক স্থানে নামাজ আদায়ের পরই জাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব নামাজ আদায় করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে আঁকড়ে ধরো।’ (সুরা হজ ৭৮)

জাকাত আদায় না করা কোরআনের নির্দেশ অমান্য করার নামান্তর। জাকাত না দিলে জমিনে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন, তোমরা তার সম্মুখীন না হও। তার মধ্যে একটি হলো, যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০১৯)

কোনো ধরনের গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়া, মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করা, অবৈধ পন্থায় উপার্জন করা এবং জাকাত প্রদান না করা অত্যন্ত ভয়াবহ গুনাহের কাজ। এমন কাজে লিপ্ত হলে মহান আল্লাহ বান্দার রিজিক সংকুচিত করে দেন। তাই আমাদের করণীয় হলো, এমন কাজ থেকে সর্বদা নিজে বেঁচে থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে সচেতন করা।