জঙ্গিবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রে তুরস্কের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
ফাইল ছবি
বিশ্বের অন্যতম জটিল এবং শক্তিশালী প্রযুক্তি হলো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন যা জঙ্গিবিমান এবং বাণিজ্যিক বিমানে ব্যবহৃত হয়। এই ইঞ্জিনগুলোর শক্তি এতটাই বেশি যে, স্থল, আকাশ ও জলপথে ব্যবহৃত যানের ইঞ্জিন সাধারণত এক হাজার হর্সপাওয়ারের হয়ে থাকে। এফ-১৬ জঙ্গিবিমান, বোয়িং ৭৩৭ এবং সেনাবাহিনীর হাউইটজার কামানে ব্যবহৃত ইঞ্জিনগুলো এ ধরনের শক্তিশালী ইঞ্জিনের উদাহরণ।
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরিতে তুরস্ক সম্প্রতি নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। এটা তাদের পশ্চিমা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করছে। ইঞ্জিন তৈরিকে প্রায়ই পরমাণু বোমা তৈরির মতো কঠিন একটি কাজ বলে গণ্য করা হয়। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনের মতো দেশগুলো টর্নেডো জেটের ইঞ্জিন তৈরিতে ১৭ বছর সময় নিয়েছে। বর্তমানে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও ফ্রান্সই স্বাধীনভাবে জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে।
তুরস্কের এই সাফল্য পশ্চিমা বিশ্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। বিশেষত যখন জার্মানি ও জাপান এখনও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারেনি, তখন তুরস্কের অগ্রগতি প্রমাণ করছে যে তারা প্রতিরক্ষা শিল্পে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। চীন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সহায়তায় জেট ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা করছে, এবং ভারত এই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তা পরিত্যাগ করেছে। তবে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন সফলভাবে তৈরি করেছে, যা তাদের প্রতিরক্ষা খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলছে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প বর্তমানে বেশ কিছু উন্নত ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিএমসি পাওয়ারের তৈরি ৪০০ হর্সপাওয়ারের টুনা ইঞ্জিন, যা সাঁজোয়া যানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া তুর্কি অ্যারোস্পেসের তৈরি PD170 ইঞ্জিন আনকা, আকসুনগুর ও বাইরাকতার ড্রোনে ব্যবহৃত হচ্ছে। একই কোম্পানির তৈরি PG50 ইঞ্জিন কারগি ড্রোনে ব্যবহার করা হচ্ছে। তুরস্কের কালে আরগে কোম্পানি KTJ3200 ইঞ্জিন তৈরি করেছে যা ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন এ্যাটমাকা এবং এসওএম ক্ষেপণাস্ত্রে।
এছাড়া, KTJ1750 ইঞ্জিন চাকির ক্ষেপণাস্ত্রে এবং KTJ3700 কারা এ্যাটমাকা ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই এই ইঞ্জিন পাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তুর্কি অ্যারোস্পেসের তৈরি TS1400 ইঞ্জিন গোকবে হেলিকপ্টার ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারে ব্যবহার করা হয়েছে, যা তুরস্কের সামরিক খাতে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।