কাশ্মিরের ভোটকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী

কাশ্মিরের ভোটকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী

সংগৃহীত

কাশ্মিরের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে তা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত মে মাসে ভারতে সাধারণ নির্বাচনের সময় পুলওয়ামায় জামায়াতের একটি শীর্ষ নেতার ভোট দেওয়ার ছবি কাশ্মিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এটি সেই প্রশ্নটিই তুলেছিল— জামায়াতে ইসলামী দেশের মূল ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসছে কি?

চার মাস পরে, এখন দেখা যাচ্ছে যে জামায়াতের নেতারা সরাসরি কাশ্মিরের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবং এতে পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়েছে। যদিও জামায়াত এখনও একটি নিষিদ্ধ সংগঠন, তাদের নেতারা অন্তত দশ-বারোটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তারা কাশ্মিরের একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ইঞ্জিনিয়ার রশিদের দলের সমর্থনও পাচ্ছেন।

কাশ্মিরের পুরনো দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল—ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)—এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এনসি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়ছে, আর পিডিপি এবং বিজেপি এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচন ১০ বছর পর হচ্ছে, এবং এর আগে জম্মু ও কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে।

কাশ্মিরের জামায়াতে ইসলামী মূলত পাকিস্তানের জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৯৮৭ সালে রাজ্য বিধানসভার ভোটে তারা শেষবারের মতো অংশ নিয়েছিল, তারপর থেকে তারা ভোট বয়কট করে প্রধানত ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পরে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ সম্প্রতি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়।

তবে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা গোপনে সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, যদিও সেটি সফল হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে তাদের বক্তব্য হলো, তারা গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানানোর জন্য এই পথ বেছে নিয়েছেন। তারা ভোটে জয়লাভ করে প্রমাণ করতে চান যে তারা জনগণের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।

এই নির্বাচনে জামায়াতের ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন কলিমুল্লা লোন, যিনি ল্যানগেট আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। জামায়াতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, অনেকেই মনে করছেন যে তাদের ভোটে অংশ নেওয়া কাশ্মিরের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ইঞ্জিনিয়ার রশিদ তার দলের মাধ্যমে জামায়াতের নেতাদের সমর্থন করছেন, এবং তাদের জোটের ফলে নির্বাচনী ল্যান্ডস্কেপে পরিবর্তন এসেছে। জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বলেছেন যে তাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মিল রয়েছে।

আগামী ৪ অক্টোবর ভোটগণনা হবে, এবং এবারের নির্বাচনে ৯০ আসনের বিধানসভায় মোট তিনটি পর্বে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটের আগের পরিস্থিতি অনুযায়ী, এবারের ভোটের হার আগের রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে অনেকেই আশা করছেন। সূত্র: বিবিসি