কলকাতায় ৪২ দিন পর চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রত্যাহার

কলকাতায় ৪২ দিন পর চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রত্যাহার

সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গড়ে ওঠা ৪২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর এর মধ্য দিয়ে কাজে ফিরতে চলেছেন তারা। তবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা না হলে আবারও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করেন তারা। মিছিল শেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।

চিকিৎসক পারমিতা ভান্ডার প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবাদের ৪২ দিন। গত শেষ ১১ দিন আমরা রাত জেগে রাস্তায় কাটিয়েছি। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জেগেছি। চড়া রোদ থেকে ভারী বৃষ্টি, কোনও কিছুই আমাদের টলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়ার কিছুটা সরকার মেনে নিয়েছে। আমরা দেখেছি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) এবং স্বাস্থ্য দফতরের ডিএমই, ডিএইচএস বদল করেছে রাজ্য সরকার। গ্রেফতার হয়েছেন সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি। আপাতত খানিক জয়ের পর আমরা আমাদের আরজি কর ক্যাম্পাসে ফিরেছি।’

জুনিয়র ডাক্তার পারমিতা বলেন, ‘গত ৯ অগস্ট যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিশ্বকে শিহরিত করেছে। ঘটনার ভরকেন্দ্র যেখানে, সেখানে থেকে আমরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। তার পর সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে আরজি করে আক্রমণ হয়েছে। প্রতিবাদ মঞ্চ ভাঙা হয়েছে। জেনারেল জরুরি বিভাগ ধুলিসাৎ করা হয়েছে। আমরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করি। কেন আমাদের সঙ্গে এ সব হচ্ছে প্রশ্ন করি। সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ যে তারা আমাদের আন্দোলনের প্রথম থেকে পাশে রয়েছেন। মাথা উঁচু করে লড়াই করে যাচ্ছি আমরা।’

আরজি করে ফিরে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের চাপে গ্রেফতার হয়েছেন আরজি করের কুখ্যাত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। টালা থানার ওসি। পদচ্যুত হয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তা ছাড়া হাসপাতালের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকা পেলেও বহু দাবি পূরণ হওয়া এখনও। তার মধ্যে মূল হল চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার।’

আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনের সঙ্গে জুড়েছিলেন এমন প্রচুর মানুষ, যারা এখন বন্যাবিধ্বস্ত। আমরা তাদের জন্য ‘অভয়া ত্রাণশিবির’ খুলেছি। সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন তারা। আমরা আগামিকাল (শনিবার) থেকে জরুরি পরিষেবা দিতে ফিরছি। আজও আমাদের জেনারেল এমার্জেন্সি বিভাগ ধ্বংসস্তুপের আকারেই রয়েছে।’

চিকিৎসকেরা সাংবাদিক বৈঠকে জানান, বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামীণ বাংলার কথা ভেবে তারা আন্দোলন সাময়িক ভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘আমাদের একটি দল ইতিমধ্যে পাঁশকুড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। সেখানকার বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। এ ভাবেই নিজেদের অধিকার, দাবির জন্য প্রতিবাদ এবং সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের কর্তব্য পালন করে যাব। এই আন্দোলন চলবে। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। যত দিন না চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার পাচ্ছি, আমরা আমাদের লড়াই চলে যাব।’

শুধুমাত্র ‘অপরিহার্য’ বা এসেনশিয়াল সার্ভিস চালু রাখবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তা বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে শুধুমাত্র আশ্বাসের পর্যায়েই তা রয়েছে। শুধুমাত্র ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছি, এটা বললেই তো হাসপাতালের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা আসে না। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আগামী শুনানির আগেই সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ আশা করছি। আমরা যদি দেখি যে শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি, তাহলে আবার আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) এবং স্বাস্থ্য দফতরের ডিএমই, ডিএইচএস বদল করেছে রাজ্য সরকার। সে অর্থে আন্দোলনকারীদের ‘বড় মাপের জয়’ হয়েছে। কিন্তু তার আগে ৪৩ দিনের ইতিহাস দেখেছে অন্দরের টানাপড়েন, মতানৈক্য এবং দ্বন্দ্ব। যা শুরু হয়ে গিয়েছিল আন্দোলনের ১৫ দিনের মাথায়। বৃহস্পতিবারের জিবি (জেনারেল বডি) বৈঠকেও তা গড়িয়েছিল তীব্র টানাপড়েনে।