সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল বন্ধ, আটকা ৩ শতাধিক মানুষ
সংগৃহীত
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন বিকল্প নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিন থেকে বিভিন্ন কাজে টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় নৌযান চলাচল শুরু হবে।
আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কক্সবাজারসহ কয়েকটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নৌযানের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার নিয়মিত নৌপথটিতে ৮ জুন থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৫ ও ৮ জুন ওই নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় মায়ানমার সীমান্ত থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনার পর নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলিতে কেউ হতাহত না হলেও সাতটি ট্রলারে গুলি লাগে। নিয়মিত নৌপথটিতে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার পর উপকূলীয় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের গোলগরা এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, বিকল্প নৌপথটিতে সব সময় সাগর উত্তাল থাকে। যার কারণে নৌযান চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবু সেই পথে নৌযান চলাচল করায় সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকল্প পথটিতেও নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই নৌপথে ৪৭টি সার্ভিস ট্রলার চলাচল করে। যেখানে দেড় শতাধিক মাঝিমাল্লা নিয়োজিত রয়েছেন। আগামী পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে নিয়মিত নৌপথটি স্বাভাবিক না হলে সার্ভিস ট্রলারের মালিক এবং মাঝিমাল্লারা সংকটে পড়বেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেন্টমার্টিনে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সার্ভিস ট্রলার চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক না হলে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা খাদ্যসংকটে পড়বেন। এছাড়া সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ও কক্সবাজারে বিভিন্ন কাজে গিয়ে অন্তত ৩ শতাধিক বাসিন্দা সেখানে আটকা পড়েছে।
এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে অনেক জেলের। টেকনাফ উপকূলে সাগরপাড়ে শত শত নৌযান সারিবদ্ধভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। এখন ইলিশের মৌসুম। তবু সতর্ক সংকেতের কারণে সাগরে গিয়ে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তবে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌসুম হিসেবে নদী ও সাগরে মাছ ধরা ও বিক্রয় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।