পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা ইরানের

পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা ইরানের

ফাইল ফটো

ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির শীর্ষ কমান্ডারকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হিসেবে রোববার এ ঘোষণা দেয়া হলো। এদিকে ইরাকের পার্লামেন্ট সেদেশ থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে রোববার রাতে ইরান সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমাবদ্ধতা তারা আর মানবে না।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এখন থেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কেবলমাত্র তার কারিগরী প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে চলবে। ইরান বলছে, তারা ইউরেনিয়ম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা ও পরিমাণ বাড়াবে এবং সমৃদ্ধকরণ ও অন্যান্য গবেষণা অব্যাহত রাখবে। জাতিসংঘের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশ ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানীকে অন্তর্ভূক্ত করে ২০১৫ সালে ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। চুক্তিতে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। কিন্তু দু’বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে এটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।

এর আগেও ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তি রক্ষায় তেহরানের সাথে আলোচনাকে প্রাধান্য দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফকে ব্রাসেলসে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু ইরান সরকারের সর্বশেষ এই বিবৃতিতে সে সম্ভাবনা পুরোপুরি ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে তেহরান বলেছে, তারা আগের মতোই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে সহযোগিতা করে যাবে।

এদিকে জার্মান, ফ্রান্স ও ব্রিটেন নেতৃবৃন্দ ইরানের প্রতি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পরমাণু চুক্তির সঙ্গে যায় না এমন সব পদক্ষেপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে আমরা ইরানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তারা ইরানের প্রতি আরো সহিংস কর্মকান্ডে অংশ নেয়া কিংবা এ ধরনের কাজকে সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।

আইএস সন্ত্রাসীদের তৎপরতা ঠেকাতে স্থানীয় সৈন্যদের সহায়তা দিতে ইরাকে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার দু’শো মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু ইরাকের পার্লামেন্টে সেদেশ থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে দেয়ার পক্ষে ভোট দেয়া হয়েছে। এমনকি দেশটির অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি ভোটের পক্ষে ১৬৮ জন আইনপ্রণেতার সাথে যোগ দিয়েছেন।

ইরাকের কেবিনেটে এখন যে কোন সিদ্ধান্তই অনুমোদিত হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে দেয়ার দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, আমরা আস্থাশীল যে ইরাকী জনগণ সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ের জন্যে সেখানে মার্কিন সৈন্যের অব্যাহত উপস্থিতি চাইবে। সূত্র : বাসস।