সংক্রমণে চীনকে ছাপিয়ে গেল ভারত

সংক্রমণে চীনকে ছাপিয়ে গেল ভারত

ছবিঃ সংগ্রহীত

আক্রান্তের বিচারে চীনকে ছাপিয়ে গেল ভারত। শনিবার ভোরে ভারতের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির পক্ষ থেকে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে একথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ভারতের আক্রান্ত সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৭৮৪। চীনের এই সংখ্যাটা সরকারিভাবে ৮২ হাজার ৯৩৩। এখন সংক্রামিতের নিরিখে বিশ্বে ১১তম স্থানে রয়েছে ভারত। সামনে থাকা ১০টি দেশেই সংক্রমণের শিকার লক্ষাধিক। চতুর্থ দফা লকডাউনে ছাড় বাড়ানোর একাধিক পরিকল্পনার মধ্যে এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

যদিও সংবাদ সংস্থার তথ্যে মৃতের সংখ্যায় চীনের (৪ হাজার ৬৩৩) থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ভারত (২ হাজার ৬৭৯)। সরকারি মতে আক্রান্তের সংখ্যা অবশ্য সকাল ৮টার পর বাড়ানো হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত বেড়েছিল ৩ হাজার ৯৬৭ জন। যা চলতি সপ্তাহে সোমবারের পর সবচেয়ে বেশি। মোট সংক্রামিত ৮১ হাজার ৯৭০। একদিনে মারা গিয়েছেন ১০০ জন। ফলে দেশে করোনায় প্রাণহানির ঘটনা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬৪৯। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৭ হাজার ৯২০ জন। সুস্থতার হার ৩৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৩০টি পুরসভা এলাকাতেই ৭৯ শতাংশ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। করোনা পরীক্ষা ও কন্টেইনমেন্টের ব্যবস্থা বাড়ায় আক্রান্ত হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে কেরল, মণিপুর, গোয়ার মতো রাজ্য ক’দিন আগেও করোনা মুক্ত হওয়ার পথে ছিল। সেই মণিপুরে একটি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র সিল করে দেয়া হয়েছে। কোয়েম্বেদু বাজারের সংক্রমণের কারণে আক্রান্তের সংখ্যায় গুজরাতকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তামিলনাড়ু। সে রাজ্যে করোনা ধরা পড়েছে মোট ৯ হাজার ৬৭৪ জনের। মৃতের সংখ্যা ৬৬। গুজরাতে সংখ্যা দু’টি যথাক্রমে ৯ হাজার ৫৯১ এবং ৫৮৬। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৮ মে থেকে লকডাউন মেয়াদ আরো দু’সপ্তাহ বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের কাছে এর পক্ষে কথা বলেছে আসাম। মহারাষ্ট্রে মুম্বই, পুনে, আওরঙ্গাবাদ সহ রাজ্যের করোনা হটস্পটগুলোতে তা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়াতে পারে উদ্ধব থ্যাকারে সরকার।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে মহারাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত সংখ্যা ২৭ হাজার ৫২৪। ১ হাজার ১৯ জন এখন পর্যন্ত মারা গেছে। দিল্লিতে আক্রান্ত সংখ্যা ৮ হাজার ৪৭০, মৃত ১১৫। তা সত্ত্বেও চতুর্থ দফার লকডাউনে জোড়-বিজোড় নীতিতে দোকান-বাজার, শপিংমল এবং মেট্রো খোলার প্রস্তাব দিতে চলেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার। এদিনই রাজধানীতে এক সেনার দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেনা ভবনের একাংশ। সংক্রমণ মুক্ত তবলিগ-ই-জামাত সদস্যদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে এদিন দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

এদিকে, বিশেষ ট্রেনে করে গোয়ায় ফেরা ৮ ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় উদ্বেগে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত। শনিবার দিল্লি থেকে তিরুবনন্তপুরমগামী ট্রেনে গোয়ায় মারগাঁও পৌছনোর কথা ৭২০ যাত্রীর। তারা কেউ গোয়ার বাসিন্দা না হওয়ায় রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে ট্রেন না থামানোর আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে, গোষ্ঠী সংক্রমণের জন্য ভারতকে তৈরি থাকার বার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনেকেরই ধারণা, এখনই কিছু ক্ষেত্রে তা লক্ষ্য করা গেছে। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি অধ্যাপক কে শ্রীনাথ রেড্ডি জানিয়েছে, বিদেশ ভ্রমণ বা সংক্রামিতদের সংস্পর্শে না এসেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, একথা হলফ করে বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে তারা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তা ধরা গেছে। তাই একে দ্বিতীয় স্তর বলা হচ্ছে। ভারতকে আরো খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।

হরিয়ানায় শুক্রবার প্রাথমিকভাবে ১০টি ডিপো থেকে ২৯টি বাস রুট চালু করা হয়েছে। ৩০ জনের বেশি যাত্রী নেয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। ১৮ মে থেকে অন্ধ্রপ্রদেশেও সরকারি বাসের পরিষেবা শুরু হবে বলে খবর। এদিন মদের দোকান খোলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। মাদ্রাজ হাইকোর্টের মদের দোকান বন্ধের নির্দেশের উপর এদিন স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। শনিবার থেকেই মদের দোকান খুলবে। তবে প্রতিটি দোকান দিনে মাত্র ৫০০ জনকে মদ বিক্রি করতে পারবে। লকডাউনের মধ্যে শুক্রবার তৃতীয় দফায় ৫১২ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কর্ণাটক সরকারও।

উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা এক অটোচালকের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। খাবার ও ফেরার ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যপ্রদেশ-মহারাষ্ট্র সীমান্ত লাগোয়া সেন্ধওয়া শহরে ৩ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। গুজরাতের ভারুচেও পুলিসের দিকে পাথর ছুঁড়েছেন বাড়ি ফিরতে মরিয়া শ’ দেড়েক পরিযায়ী শ্রমিক। বিহার সরকার ট্রেনের অনুমতি না দেয়ায় শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন বলে অভিযোগ গুজরাত প্রশাসনের। এদিন লন্ডন থেকে বিমানে ৩৩৩ জনকে চেন্নাইতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সূত্র : বর্তমান