চার যুগ আলগা থাকার পর দেয়া হল দরজা

চার যুগ আলগা থাকার পর দেয়া হল দরজা

ছবি : সংবাদাতা

চার যুগ পর ঈশ্বরদীর সেই ঐতিহ্যবাহী দরজাবিহীন ‘তৃপ্তি হোটেল’টিতে দরজা দেয়া হল। যে হোটেলটিতে কোন দরজা ছিল না। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠা থেকে ৪৯ বছর যাবৎ হোটেলটি দরজা ছাড়ায় রাত-দিন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকতো।সেই হোটেলটি বুধবার (১২ আগস্ট) দরজার মুখ দেখতে পেলো।

বড় বড় গুনিজনসহ দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতা, এমপি, মন্ত্রী, পদস্থ কর্মকর্তাদের পদচারণা পড়েছে এই হোটেলে।

ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশেন (বিবিসি) সহ স্থানীয়,জাতীয় পত্র-পত্রিকায় এই হোটেল নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছে বহুবার। সাহিত্যিক আনিসুজ্জামান, সাংবাদিক কলামিষ্ট রণেশ মৈত্র, মরহুম চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনসহ দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক সাহিত্যিকরা এই হোটেলে আড্ডায় মেতেছেন। এখানে পদচারনা পড়েছে মরহুম রাজনীতিক কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল, লেখক-সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কামাল লোহানী, সাবেক মন্ত্রী মরহুম শামসুর রহমান শরীফ, সাবেক এমপি মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার, সাবেক এমপি আব্দুল বারি সরদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক পৌর মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলুসহ অসংখ্যক বর্ষীয়ান রাজনীতিকের।

আন্তর্জাতিক পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী ছাড়াও রাশিয়া, বেলারুশ, চীন, ভারত, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নাগরিকরা এই হোটেলের খাবার একদিকে যেমন প্রশংসা করেছেন, তুলেছেন ঢেকুর। যখনই বিশের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন ঈশ্বরদীতে গেছেন; এ হোটেলে পা বাড়িয়েছেন। খেয়েছেন আচ্ছা মত। তুলেছেন ঢেকুর। তাই তো তৃপ্তি নামের স্বার্থকতা “তৃপ্তি হোটেল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করার ঠিক  ২ দিন পর ১৯ ডিসেম্বর এই হোটেলটি চালু করেন আব্দুর রহিম নামের এক ব্যবসায়ী। কোন পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলেও কাকতালীয়ভাবে ঐতিহাসিক ঈশ্বরদী মুক্ত দিবসের দিনই (১৯ ডিসেম্বর’৭১) এই হোটেলটির যাত্রা শুরু হয় বলে জানান তৃপ্তি হোটেলের অন্যতম পরিচালক আমজাদ হোসেন।

 এই হোটেলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মরহুম ইদ্রিস আলীর ছেলে আব্দুল হান্নান জানান, আব্দুর রহিমের পর হুমায়ুন কবির ও আমার বাবা মহব্বত আলী এই হোটেলটির হাল ধরেন। এর পর মহব্বত আলীর ছোট ভাই ইদ্রিস আলী ইদু হোটেলটি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তবে হোটেল পরিচালনায় ছিলেন তারই ছোট ভাই আমজাদ হোসেন ডোমনা। বংশ পরম্পরায় বর্তমানে হোটেলটি পরিচালনা করেন ইদ্রিস আলী ইদুর দুই ছেলে আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মালেক মানিক।

তৃপ্তি হোটেলের শুরুর প্রায় অর্ধশতাব্দি পর অবশেষে এই হোটেলে সার্টার দরজা লাগানো হলো। হোটেলটি পরিচালনাকারীরা আক্ষেপ করে বলেন, দরজাবিহীন এই হোটেলটির ঐতিহ্যময় বৈশিষ্ট্য আর ধরে রাখা গেল না। এখন থেকে আর বলার সুযোগ রইলনা যে, এই হোটেলের দরজা-জানালা নেই।

 হোটেলের বর্তমান পরিচালক আব্দুল মালেক মানিক জানান, করোনাকালে যখন প্রশাসন হোটেলটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় তখন বন্ধ থাকা হোটেলটিতে স্থানীয় বখাটের দল রাতভর আড্ডা দিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করে দিচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে হোটেলটি রক্ষা করার স্বার্থে প্রতিষ্ঠার ৪৯ বছর পর দরজা ও শাটার লাগাতে বাধ্য হয়েছি। তৃপ্তি হোটেলের দরজা লাগানোর মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যময় এই হোটেলের প্রধান বৈশিষ্ট্যও হারিয়ে গেল।

 কিন্ত তৃপ্তির জোস থেকেই যাবে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ দৃঢ়তার সাথে জানালেন। তাই সকলে মনে করে ‘তৃপ্তি হোটেল’ এ নামটি হয়তো বা বহমান থাকবে যুগ যুগ ধরে।