পাবনা-৪ উপ-নির্বাচনের প্রচারণায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, করোনা সংক্রমণের আশংকা

পাবনা-৪ উপ-নির্বাচনের প্রচারণায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, করোনা সংক্রমণের আশংকা

ছবি : সংবাদাতা

স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। পাবনা-৪ সংসদীয় আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচন ২৬ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষ্যে  নিবাচন ওয়ার্ক কর্মীদের কাছে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রচারণায় মিছিল, জনসভা ও সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না প্রতিদ্ব›দ্ধী প্রার্থীরা । নেতাকর্মীদের এমন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে করোনার সংক্রমণ বাড়বে আশংকা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২রা এপ্রিল পাবনা-৪ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু মারা যান। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ২৬ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে গত ২৪ আগস্ট শূন্য হওয়া আসনে উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী বিধিমালায় জনসমাবেশ, মিছিল, মিটিং এ নিষেধাজ্ঞাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে প্রার্থীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু প্রচারণায় শুরু থেকেই আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থনে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত করে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে উপস্থিত নেতারা কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করলেও কোন দলের সাধারণ কর্মী, সমর্থকরা এবং স্থানীয় জনতা তার প্রয়োজনই মনে করছেন না।

সরেজমিনে, উপ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সোমবার নুরুজ্জামান বিশ্বাসের সমর্থনে আটঘরিয়ায় লক্ষীপুরে অনুষ্ঠিত এমনই এক সমাবেশে গিয়ে দেখা যায় সমাবেশে অন্তত: পাঁচ হাজার মানুষের জমায়েত । সভার ব্যানারে পথসভা লেখা থাকলেও তা ছিল এক বিরাট জনসভা। বড় বড় মিছিল নিয়ে আশেপাশের গ্রাম থেকে আসা মানুষেরা সামাজিক দুরত্ব দূরের কথা কেউই মাস্ক পরেন নি।

গত এক সপ্তাহে ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ায় কমপক্ষে এমন দশটি সমাবেশ কে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। এদিকে, নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই প্রতিদ্ব›দ্ধী বিএনপিও। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে চলছে মিছিল, জনসভা।

দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে শুক্রবার ঈশ্বরদীর সাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল জনসভা করে বিএনপি। অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। এর ঈশ্বরদীর মুলাডুলি, আটঘরিয়ার মাঝপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে কমপক্ষে ১০টি বড় বড় সমাবেশ ও প্রতিনিধি সভা করেছেন বিএনপি নেতারা। এসব সমাবেশে মাস্ক পরিধান ছাড়াই বড় বড় মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন।

প্রশাসনও ছিল নির্বিকার। জনসভায় আগতদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেউ দিয়েছেন গরম কিংবা ভুলে যাওয়ার অযুহাত, কেউ অবাস্তর কথা বলে এড়িয়ে গেছেন। বিষয়টিকে খুব বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন না বড় দু’টি দলের নেতারাও ।

স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, এ আসনে আওয়ামীলীগের নির্বাচন সমন্বয়কারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সীমিত পরিসরে প্রতিনিধি সভা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচন পরিচলানার চেষ্টা করছি। তবে, দল ও প্রার্থীর প্রতি আবেগ ও ভালোবাসায় নিষেধ উপেক্ষা করেও কর্মীরা মাঠে নামায় আচরণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক সময় চলা সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের কর্মীরা যেন অন্তত: মাস্ক পরেন সেটি নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা করছি।

অপরদিকে, নিজেদের কর্মীদের অসচেতনতার দায়ও সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পাবনা-৪ আসনের উপ নির্বাচনে বিএনপির মনিটরিং কমিটির প্রধান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার জনগণকে করোনার গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছে। এ কারনে কেউ মাস্ক পরে না। নির্বাচনের কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে তার দায়ও সরকারকেই নিতে হবে। সরকারের জনগণকে নিয়ে কোন ভাবনা নেই, তারা কেবল নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই ব্যস্ত।

জনসমাবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ আবু জাফর বলেন, জন সমাবেশ ও মিছিল, মিটিং থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়বে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। যার প্রভাবে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই অবহেলা না করে রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধও জানান তিনি।

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও পাবনা-৪ উপনির্বাচনের রিটার্নিং আফিসার আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, নির্বাচনী আচরণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছি। শর্ত ভঙ্গ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই।