হজ্ব প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করলেন এজেন্সির মালিকরা

হজ্ব প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করলেন এজেন্সির মালিকরা

ছবিঃ সংগৃহিত।

গত বছরের চেয়ে এক লাখ টাকার বেশি খরচ কমিয়ে আগামী বছরের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ-১’ ও ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ-২’ নামের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

এই হজ প্যাকেজগুলোর মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। কিন্তু সরকারের এ হজের প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে ৪৫ হাজার টাকা এবং প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার টাকা বেশিতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকরা।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে ‘বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ২০২৫ ঘোষণা’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা এ প্যাকেজ ঘোষণা করেন তারা।

আগামী বছর হজে যেতে সরকারিভাবে দুটি ও বেসরকারি একটি প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এজেন্সির মালিকরা। এর মধ্যে ‘সাধারণ প্যাকেজ’ পাঁচ লাখ ২৩ হাজার টাকা আর ‘বিশেষ প্যাকেজ’ ছয় লাখ ৯৯ হাজার টাকা ঘোষণা করেছেন তারা, যা সরকারি প্যাকেজের চেয়ে যথাক্রম ৪৫ হাজার এবং প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার টাকা বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে এজেন্সির মালিকরা জানান, সরকার যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এতে শুভংকরে ফাঁকি রয়েছে। এতে হাজিদের খরচ কমবে না; বরং বাড়বে। উল্টো ভোগান্তিতে পড়বেন তারা। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা হজ প্যাকেজ ঘোষণা করছি।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার বলেন, হাজিদের সুবিধার্থে আমরা দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এর মধ্যে একটি থাকবে সাধারণ প্যাকেজ অন্যটি বিশেষ প্যাকেজ। দুটি প্যাকেজে সরকার ঘোষিত প্যাকেজের চেয়ে একটু বেশি মূল্য ধরা হয়েছে। তবে আমাদের প্যাকেজে সেবার মান উন্নত করা হয়েছে। সাধারণ প্যাকেজ পাঁচ লাখ ২৩ হাজার, এই প্যাকেজটির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি মুসল্লি হজ পালন করতে যান। সবার সামর্থ্যের মধ্যে রেখেই এ প্যাকেজটির মূল্য ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৩৬৩ টাকা। সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার ৩২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে ধরে এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজে সৌদি অংশের খরচ ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে থাকবে মক্কা মদিনা বাসা ভাড়া, জমজম পানি, সার্ভিস চার্জ, খাওয়া খরচ ইত্যাদি। আর বাংলাদেশ অংশের খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে বিমান ভাড়া এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, হজ গাইড ফি ইত্যাদি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ প্যাকেজে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন; হজ ভিসা এবং সৌদি আরবে যাওয়া-আসার বিমান টিকিট সরবরাহ, মক্কা আল-মোকাররমায় পবিত্র মসজিদুল হারাম এর বাইরের চত্বর হতে সর্বোচ্চ তিন কিলোমিটারের এবং মদিনা আল মনোয়ারায় পবিত্র মসজিদে নববী থেকে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে মারকাজিয়া এরিয়ার বাইরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল/বাড়ি। প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ছয় জনের আবাসন মিনার তাঁবুতে ম্যাট্রেস, চাদর, কম্বল ও বালিশের ব্যবস্থা, আরাফায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুর ব্যবস্থা, মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার পরিবেশন, মক্কা-মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা, হজযাত্রী ও গাইডদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, হজ ও ওমরাহ নির্দেশিকা, আইডি কার্ড, লাগেজ ট্যাগ সরবরাহ, দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীকে পাঁচ লিটার জমজম পানি সরবরাহ, কম-বেশি ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য একজন গাইড থাকবে এবং এজেন্সির সঙ্গে আলোচনা করে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে রুম আপগ্রেডেশন করা যাবে।

হজযাত্রীকে কোরবানি বাবদ আনুমানিক ৭৫০ সৌদি রিয়াল সঙ্গে নিতে হবে এবং কোরবানি নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হবে, সৌদি আরবে সর্বনিম্ন ৩০ দিন সর্বোচ্চ ৪৮ দিন অবস্থান, মদিনায় পাঁচ হতে আট দিন অবস্থান, মুজদালিফায় নিজ ব্যবস্থাপনায় অবস্থান, নিয়মিত সেবন করতে হয় এরূপ ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী (ব্লাড সুগার টেস্টের স্ট্রিপ, নিডিল, ইনসুলিন, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ) চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ কমপক্ষে ৫০ দিনের ওষুধ সঙ্গে নিতে হবে।

এ সময় সংগঠনটি জানায়, সরকার ঘোষিত সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজে (মসজিদুল হারামের আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা, আর অপর প্যাকেজে (মসজিদুল হারামের আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি) পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে সাধারণ প্যাকেজে চার লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে বিশেষ প্যাকেজে যা যা থাকছে তা জানায় সংগঠনটি। এ প্যাকেজটি সাধারণ ভিআইপি প্যাকেজ বলা হয়। এ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৯৯ হাজার টাকা। আর সরকারিভাবে এ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। সে হিসেবে এ প্যাকেজে মূল্য বেশি এক লাখ ২৩ হাজার ৩২০ টাকা।

সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার ৩২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে ধরে এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজে সৌদি অংশের খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ চার হাজার ৬৩৮ টাকা। এরমধ্যে থাকবে মক্কা মদিনা বাসা ভাড়া, জমজম পানি, সার্ভিস চার্জ, খাওয়া খরচ ইত্যাদি। আর বাংলাদেশ অংশের খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার ৭৬০ টাকা। এরমধ্যে রয়েছে বিমান ভাড়া এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, হজ গাইড ফি ইত্যাদি।

এ প্যাকেজে যারা যাবেন তাদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিচত্বর হতে এক কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। হারাম শরীফ যাতায়াতে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। একইভাবে মদিনায় মার্কাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। মিনায় ইয়োলো জোনে (জোন-২) তাঁবুর অবস্থান এবং মিনা-আরাফায় আপগ্রেডেড ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস সুবিধা, মক্কার হোটেল/বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুযদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াত, অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসন, বাড়ি/হোটেল কক্ষে/ফ্লোরে রেফ্রিজারেটর এর ব্যবস্থা, মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য একজন হজ গাইডের ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং দমে শোকর (কোরবানি) খরচ ৭৫০ সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কোন এয়ারলাইন্স এ বছর ডেডিকেটেড ফ্লাইট ব্যতীত শিডিউল ফ্লাইটে কোনো হজযাত্রী বহন করতে পারবে না। প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি সরকার কর্তৃক কোনো খাতে খরচ বাড়ানো হলে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রী ন্যূনতম তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবশ্যই নিজ নিজ এজেন্সির ব্যাংক হিসেবে জমা করে অথবা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ ও সংরক্ষণ করবেন। কোনোক্রমেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কোনো প্রকার লেনদেন করবেন না। প্রত্যেক হজযাত্রী হজ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে অবগত হয়ে এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। এ বছর ৬৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সের হজ গমনেচ্ছুরাও পবিত্র হজে গমন করতে পারবেন। কোরবানি খরচ প্রত্যেক হজযাত্রীকে পৃথকভাবে নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে।