জলাবদ্ধতায় নাকাল বোয়ালমারীর ২০ হাজার পৌরবাসী
ছবি : সংগৃহীত
নানা সমস্যা আর চরম দুর্ভোগের মধ্যে বোয়ালমারী পৌরসভার অন্তত ২০ হাজার মানুষ বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল ভরাট করে যত্রতত্র বাড়ি ঘর নির্মাণ ও স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার কারনে বছরের বেশীর ভাহ সময়ই চরম দুর্ভোগ পোহাতে নাগরিকদের। সামান্য বৃষ্টিতেই অধিকাংশ এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে স্কুলগামী শিশু কিশোর, বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় এলাকাবাসীর।
বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকার ঘরবাড়িতেও উঠে যায় পানি। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় তিন থেকে ছয় মাস দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা ও ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত পানির মধ্যে বসবাস করতে হয় তাদের। ফলে পানি বাহিত রোগ, মশার উপদ্রব, চলাফেরায় দুর্ভোগসহ চরম বিপাকে পড়েন পৌর বাসিন্দারা। ২০০০ সালে বোয়ালমারী সদর, গুনবহা ও চতুল ইউনিয়নের প্রায় ১৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১৯টি মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় পৌরসভাটি। বিগত সরকারের আমলে প্রথম শ্রেণির পৌরসভাতে উন্নতি হলেও দক্ষিণ বঙ্গের প্রাচীন এই জনপদের মানুষ কাঙ্খীত কোনও সেবা পাচ্ছেন না।
গত মাসের অব্যাহত বৃষ্টিতে পৌরসভার স্টেডিয়াম পাড়া, আধাঁরকোঠা জেলে পাড়া, থানা এলাকা, দক্ষিণ কামারগ্রাম ঋষিপাড়া, ছোটকামরগ্রাম মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকা, ছোলনা দক্ষিণ পাড়ার ৩, ৫, ৭ ও ৯ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা, বাজারের ডাকবাংলো এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।এ এলাকাগুলোতে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি জমে থাকছে মাসের পর মাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন মহল্লার ভেতরের অনেক সড়ক জমেছে একহাঁটু পানি। একটু নিচু এলাকায় ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছে পানি। এসব এলাকায় ঘর থেকে বের হতে অনেকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে। আবার কেউ কলার ভেলা বানিয়ে নিয়েছে। স্কুলগামী শিশু কিশোরদের পানি ভেঙে সড়কে এসে পোশাক পরিধানের দৃশ্য চোখে পড়ছে। এসব এলাকায় ঘরের মেঝেতে বা বারান্দায় অস্থায়ী চুলায় চলে রান্না বান্নার কাজ। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন অনেকেই। সবচেয়ে বিপাকে পড়তে হয় কেউ অসুস্থ হলে বা কারও মৃত্যু হলে।
শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার খান রফিকুল কাদের, আঁধারকোঠার সুবোধ রাজবংশী, শাহনেওয়াজ বুলবুল টুলু জানান, পৌরসভার মধ্যে বিশ-ত্রিশ বছর আগে এমন ব্যবস্থা ছিলো না। এ এলাকায় গোরস্থান সড়কের পাশ দিয়ে একটি সরু খাল ছিলো, ওই খাল দিয়ে ছোলনা হয়ে পানি দাদুড়িয়া বিলের দিকে নেমে যেত। বর্তমানে যে যার মতো ঘরবাড়ি, দোকানপাট, অফিস নির্মাণ করায় খালটির চিহ্নও নেই। পৌরসভা একটি ড্রেন করে কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা ভূমির স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে উঁচু, ফলে পানি নিষ্কাশিত হয় না।
বোয়ালমারী পৌরসভার প্রশাসক ও বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলমান রয়েছে। কাজ করতে গিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ জন্য পৌরবাসীদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই এগিয়ে আসলে আশাকরি অচিরেই জলাবদ্ধতার সমাধান করা যাবে।