ইউটিউবারকে ম্যাচ খেলানোয় আর্জেন্টিনায় তুলকালাম

ইউটিউবারকে ম্যাচ খেলানোয় আর্জেন্টিনায় তুলকালাম

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার স্বার্থে চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায় হর-হামেশা। কিন্তু তাই বলে আর্জেন্টিনার মতো ফুটবল-জনপ্রিয় দেশের শীর্ষ লিগে এমন কিছু ঘটতে পারে! এমনই অবাক করা এক ঘটনা ঘটেছে আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ লিগে। একজন তারকা ইউটিউবারকে ম্যাচ খেলানো নিয়ে দেশটিতে তুলকালাম চলছে। জানা গেছে, ক্লাবের প্রচারণার অংশ হিসেবে তাকে মাঠে নামানো হয়।

যদিও ওই ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার মাঠে ছিলেন এক মিনিটেরও (মাত্র ৫০ সেকেন্ড) কম। ইভান বুয়াখেরুক ফার্নান্দেজ নামের (স্প্রিন নামেও পরিচিত) ওই ইউটিউবারকে রিয়েস্ত্রা ক্লাব মাঠে নামায় স্ট্রাইকার পজিশনে। যদিও তিনি একটি বলও স্পর্শ করতে পারেননি। যা নিয়ে দেশটির ফুটবলাঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এমনকি আর্জেন্টিনা ফুটবল এসোসিয়েশনের (এএফএ) পরিচালক এথিক্স কোর্টের মাধ্যমে তদন্তেরও ঘোষণা দিয়েছেন।

এমন ঘটনাকে ‘অপ্রয়োজনীয়’, ‘নীতিবিরুদ্ধ’, ‘লজ্জাজনক’ ও ‘অপমানজনক’ নানা মন্তব্যে বিশেষায়িত করছেন সাবেক ফুটবলাররাও। এএফএ এক বার্তায় জানিয়েছে, আর্জেন্টাইন ফুটবলের খ্যাতি ও বিশ্বস্ততায় আঘাত করে এমন যেকোনো ঘটনা অবৈধ, অনৈতিক ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে। উল্লেখিত কাউকে দলে যুক্ত করা কোড অব এথিক্সের একটি কিংবা একাধিক নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই অপ্রয়োজনীয় ঘটনা নিয়ে এথিক্স ট্রাইব্যুনাল তদন্ত করবে।

এর আগে সোমবার (১১ নভেম্বর) আর্জেন্টাইন লিগের শীর্ষ দল ভেলে সারফিলের বিপক্ষে ম্যাচে বিতর্কিত ওই ঘটনার জন্ম দেয় রিয়েস্ত্রা ক্লাব। কেবলই প্রচারণার অংশ হিসেবে তারা ২৪ বছর বয়সী জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারকে মাঠে নামায় বলে স্বীকারও করেছে। ইউটিউবে ফার্নান্দেজের সাবস্ক্রাইবার প্রায় ৮০ লাখ, ইনস্টাগ্রামে অনুসারী ৫০ লাখের বেশি। এ ছাড়া আমেরিকান ভিডিও লাইভ-স্ট্রিমিং সাইট টুইচ-এ তার অনুসারী ১ কোটিরও কাছাকাছি। সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই মূলত বিপণনের এই কৌশল বেছে নেয় ক্লাবটি।

ফার্নান্দেজকে নিয়ে ম্যাচের শুরু করার সময়ই টিভি ধারাভাষ্যকার বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলেন, ‘মাঠে কোথায় দাঁড়াতে হবে সে এটাও জানে না। অবিশ্বাস্য ঘটনা, ফুটবলের জন্য এটি লজ্জার ও চূড়ান্ত অপমানজনক।’ এমন বিতর্কিত কাজের পরও নিজেদের মতো করেই সরল জবাব দিয়েছে ক্লাব রিয়েস্ত্রা। ক্লাবটির কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমে বলেন, এটি প্রচারণারই অংশ এবং ক্লাবের মূল স্পন্সর খোঁজার একটি চেষ্টার প্রক্রিয়া। একটি এনার্জি ড্রিংকস কোম্পানির সঙ্গে তাদের আলোচনার অংশ এটি।

একই সুরে রিয়েস্ত্রার অধিনায়ক মিল্টন সেলিস জানান, ‘ক্লাবের স্বত্বাধিকারী ভিতো স্তিনফালে, মূল স্পন্সর এনার্জি ড্রিংক কোম্পানিটিও যার মালিকানাধীন, তার কাছ থেকেই এই ভাবনাটা এসেছে।’ কেবল তাই নয়, বিষয়টি নাকি আগেই প্রতিপক্ষ সারফিলেকে জানিয়ে রেখেছিল রিয়েস্ত্রা। রিয়েস্ত্রার কোচ ক্রিস্তিয়ান ফাবিয়ানি বলেন, ‘আমি তাকে (প্রতিপক্ষ কোচ) বলেছিলাম যে, চুক্তিগত কারণে তাকে (ইউটিউবার) খেলাতে হবে, কারণ এই ক্লাব অনেকটাই নির্ভর করে প্রচারণার ওপর। চুক্তিটি বেশ আগেই হয়েছিল। তিনি হেসে বলেছিলেন, আধ ঘণ্টার মতো তাকে মাঠে ছেড়ে দিতে।’

অবাক করা বিষয়, রিয়েস্ত্রার অধিনায়কও ফার্নান্দেজের ফুটবল-জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন— ‘সে স্ট্রিমার হিসেবে নম্বর ওয়ান!’ তবে এই ম্যাচই আলোচিত ওই ইউটিউবারের প্রথম এবং শেষ ম্যাচ বলে জানা গেছে।