ঘন ঘন কফি পান স্বাথ্যোর জন্য ভাল নাকি ভাল না

ঘন ঘন কফি পান স্বাথ্যোর জন্য ভাল নাকি ভাল না

এক চুমুকে ক্লান্তি দূর শুধু নয়, কফির রয়েছে হরেক গুণ। ফাইল ছবি

সারা দিনের ক্লান্তি কাটাতে এক কাপ ব্লাক কফি। একটা সময় ভাবা হত কফি খেলে হার্ট নষ্ট হয়, রক্তচাপ বাড়ে, ঘুম হয় না। আর এই তিনটি সমস্যাই যেহেতু করোনাভাইরাসের পথ প্রশস্ত করে, ভয় একটু ছিলই। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করলেন, বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কফি খাওয়া হার্টের জন্য খারাপ নয় বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল।

উচ্চ রক্তচাপের জন্যও সে কফির দোষ নেই। আবার দিনে দুই বার চিনি ছাড়া ব্লাক কফি খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে ওজন কমারও অবস্থা হয়। খুদা কমে যায় বলে ডায়েটিং সহজ হয়।

কফি খেয়ে ব্যায়াম করলে দ্বিগুণ এনার্জি পাওয়া যায়। বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। সব মিলিত প্রভাবে ওজন–প্রেশার–সুগার যেমন ঠিক থাকে, কমে হৃদরোগের আশঙ্কা। আর এই সবকটিই যেহেতু কোভিডের কো-মর্বিডিটি, এরা বশে থাকলে কোভিডের জটিলতার আশঙ্কা কমে যায়। অতএব কফির ভক্ত হলে, দিনে দু-তিন কাপ খেতেই পারেন।

কফি ভাল?

• ২০১৫ সালে সার্কুলেশন পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে যাঁরা কফি খান না বা ন–মাসে ছ–মাসে খান তাঁদের তুলনায় যাঁরা দিনে ৩–৫ কাপ বা তার বেশি কফি খান, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে কম বয়সে মৃত্যুর হার তাঁদের মধ্যে বেশ কম। আবার ২০১৩ সালে ওই পত্রিকাতেই প্রকাশিত আরেকটি প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, যাঁরা কফি মোটে খান না তাঁদের তুলনায় যাঁরা দিনে ৩–৫ কাপ খান তাঁদের হৃদরোগ কম হয়।

• ২০১২ সালে সার্কুলেশন, হার্ট ফেলিওর নামের পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যাঁরা দিনে ৪ কাপের মতো কফি খান, তাঁদের মধ্যে হার্ট ফেলিওরের আশঙ্কা সবচেয়ে কম।

• মেয়ো ক্লিনিকের গবেষকদের মত, অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ করে কফি খেতে শুরু করলে ক্যাফেইনের প্রভাবে হার্ট ও রক্তনালী উদ্দীপিত হয়ে রক্তচাপ সাময়িক একটু বাড়তে পারে। সময়ের সঙ্গে সে প্রভাব কেটে যায়। অর্থাৎ কফি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় বলে যে ধারণা ছিল, তা ঠিক নয়।

•  আগেকার দিনে ভাবা হত রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি না খাওয়াই ভাল, কারণ তাতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। ক্যাফেইনের প্রতি যাঁদের অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা আছে, তাঁদের কখনও কখনও এ রকম হলেও অন্যদের কিছু হয় না।

কফি ভাল বিনের গুণে

কফি বিনে আছে এমন কিছু ফাইটোকেমিক্যাল, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সিদ্ধহস্ত। আর হৃদরোগ থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন অসুখের মূলে আর কোভিডের বাড়াবাড়ির মূলেও যে থাকে এই প্রদাহ, তা তো আর নতুন কথা নয়। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ, বেশি কোনও কিছুই ভাল নয়। পরিমিত কফি পান করা যেতেই পারে রোজ।

কফির ক্ষতি ও তা সামলানোর উপায়

কফিতে সমস্যা হয় কারও কারও। এর মূলে আছে কফির অন্যতম উপাদান ক্যাফেইন। তার পরিমাণ যদি কোনওভাবে কমানো যায়, তাহলেই আর সমস্যা নেই। এবং সে উপায়ও আছে। একটু খুঁজলেই বাজারে ক্যাফেইনহীন কফি পাবেন। সেটা খেলেই সব দিক বজায় থাকবে।

আপনার যদি মনে হয় কফি খেলে রক্তচাপ বাড়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘরে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র কিনে ফেলুন। দু–চার সপ্তাহ ধরে কফি খাওয়ার আগে ও খাওয়ার দু–এক ঘণ্টা বাদে রক্তচাপ মেপে তা লিখে রাখুন। এরপর কয়েক সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রেখে ওই একই সময় রক্তচাপ মেপে দেখুন তাতে কোনও ফারাক এল কিনা। ফারাক এলে বুঝতে হবে ক্যাফেইনের ধকল নিতে পারছে না আপনার হার্ট, যদিও খুব সামান্য ক্ষেত্রেই এ রকম হয়। সেক্ষেত্রে হয় কফি খাওয়া বন্ধ করুন, নয়তো খান ডি–ক্যাফেইনেটেড কফি, সব দিক বজায় থাকবে।