সিলেট এমসি কলেজে ধর্ষণ: ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

সিলিটের ম্যারিচাঁদ কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দুই মাস পরে সাইফুর রহমানকে প্রধান আসমি করে আটজনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কাশেমের আদালতে এ চার্জশিট জমা দেয়া হয়।

অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে ছয়জনের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণে অংশ নেয়া ও বাকি দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্তকালীন ঘটনাস্থলের আলামত, বাদী ও ভিকটিমসহ অন্য সাক্ষী ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং ডিএনএ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ চার্জশিট করা হয়েছে।

চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, মামলার এজাহারনামীয় আসামি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), মিসবাহ উর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিন। এর মধ্যে রাজন ও আইনুদ্দিন ছাড়া অপর ছয়জন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

এ তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, চার্জশিট দাখিলের প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়ে দুপুর ১২টায় নগরের শাহজালাল উপশহরের এসএমপির উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।

তিনি জানান,ধর্ষণে সরাসরি যুক্ত থারার জন্য মো. আইনুদ্দিন ও মিসবাউল ইসলাম রাজন, সাইফুর রহমান, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্করকে আসামি করা হয়েছে ।অন্যদিকে ধর্ষণে সহযোগিতার জন্য মো. রবিউল হাসান ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া আট আসামির বিরুদ্ধে একই সঙ্গে প্যানেল কোডের ৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৩৮৫/৩৪ ধারা অনুযায়ী আরও একটি অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে তিনি আরো জানান।

গত রোববার হাতে পাওয়া ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণেরস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের সঙ্গে মামলার আসামিদের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়।

এর আগে গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর দুদিনে এ মামলায় গ্রেফতার ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারের ডিএনএ ল্যাবে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তীতে এ প্রতিবেদন তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌছে রোববার (২৯ নভেম্বর) ।

উল্লেখ্য যে,চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ (২১)। ছাত্রাবাসের আঙিনায় স্বামীকে আটকে রেখে প্রাইভেটকারের ভেতর ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। পুলিশ নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে ওইদিন রাতেই মহানগর পুলিশের শাহপরাণ (রহ.) থানায় নির্যাতিতা নারীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় চারজনকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া সিলেট জেলা পুলিশ দুজনকে, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আটজন আসামিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, শাহ মাহবুবুর ও অর্জুন লস্কর ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।