অনলাইন শপিং জনপ্রিয় হলেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে

অনলাইন শপিং জনপ্রিয় হলেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে

ফাইল ছবি।

কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে অনলাইন শপিং জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও কিছু অসাধূ ই-কমার্স ব্যবসায়ী স্বচ্ছতার অভাবের সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে।

তবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বলছে, তারা তাদের সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ তৈরির কাজ করছে যা প্রতারণার হাত থেকে গ্রাহকদের রক্ষা করতে সহায়ক হবে।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্স শুরু হলেও গত পাঁচ বছরে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে এসে অনলাইন কেনাকাটার চাহিদা বেড়েছে বহুলাংশে। করোনা থেকে সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অনলাইন শপিংয়ের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

কিন্তু এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একদল অসাধূ ব্যবসায়ী বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহকদের প্রতারিত করছে। যথাযথ নজরদারি না থাকার কারণে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পণ্যের অনলাইন ব্যবসা।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক অনলাইন ব্যবসায়ী ভালো-মানের পণ্যের ছবি দেখালেও গ্রাহকদের সরবরাহ করছেন নিম্নমানের পণ্য। এছাড়া বিভিন্ন ছাড়ের ঘোষণা দিয়েও তারা মানুষকে আকর্ষণ করার চেষ্ট করে।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার ফরিদা ইয়াসমিন নামের এক বাসিন্দা ইউএনবিকে জানান, বেশ কয়েক মাস আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেজ থেকে আটটি থ্রি-পিস কেনেন। পণ্যগুলোর দাম হিসাবে তিনি বিকাশের মাধ্যমে ১০০ টাকা ডেলিভারি চার্জসহ ৫,৭০০ টাকা ওই বিক্রেতার নম্বরে পাঠানোর পর, রাজধানীর মিরপুর-ভিত্তিক বিক্রেতা ওই সময় ১৫ দিনের মধ্যে পণ্যগুলো সরবরাহ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হওয়ার পরও সেই পণ্য আর পাননি তিনি।  

‘আমি তাদের ফেসবুক পেজে দেয়া নম্বরে ফোন করলেও কেউ ফোনটি রিসিভ করেননি এবং আমি এখনো পণ্যগুলো পাইনি,’ বলেন ফরিদা ইয়াসমিন।

তবে তার এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে কথা বলে সমাঝোতার মাধ্যমে দুই মাস পর সেই অনলাইন বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য কেনার জন্য দেয়া টাকা ফেরত পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

কুষ্টিয়ার বাসিন্দা আফরোজা বেগম জানান, অনলাইনে তিনি কিছু প্রসাধনী কিনেছিলেন। ছবি দেখেই তিনি পণ্য করেছিলেন এবং এর জন্য অগ্রিম টাকাও পরিশোধ করেছিলেন।

পণ্যের দাম হিসেবে দেয়া টাকা ফেরত না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে আফরোজা বলেন, ‘তারা আমার পণ্য পাঠায়নি। এরপর যখন আমি তাদের দেয়া নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করি তারা আমার নম্বরও ব্লক করে দেয়।’

ই-কমার্স নীতিমালা শিগগিরই

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহিদ তমাল জানান, অনলাইনে প্রতারণার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। প্রায় এক লাখ ফেসবুক পেজ রয়েছে যার মাধ্যমে বিক্রেতারা তাদের পণ্যগুলো বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, ‘তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই, কারণ তাদের বেশিরভাগেরই ট্রেড লাইসেন্স বা টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) নেই।

গ্রাহকদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচানো বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতারণা নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম উপায় হলো গ্রাহক সংবেদনশীলতা, বলেন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক।

বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতকে উন্নত করতে ই-ক্যাব গঠিত হয়েছে। ই-ক্যাবের অধীনে বর্তমানে প্রায় ৫০০ ওয়েবসাইট এবং দুই হাজার ফেসবুক পেজ রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াহিদ তমাল জানান, ই-ক্যাবের সদস্য হওয়ার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন এবং অন্যান্য কিছু তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক।

‘আমরা সকল তথ্য যাচাইয়ের পরই সদস্যপদ প্রদান করি এবং যখন আমাদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে আমাদের সদস্য নন, এমন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না,’ বলেন তিনি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তমাল বলেন, ই-ক্যাব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ তৈরির জন্য কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোর জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করার জন্যও কাজ করছি। এই নীতিমালার কাজ এবং ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডউর’ শেষ হওয়ার পরে অনলাইন প্রতারণা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।”

এছাড়া ই-ক্যাব ‘এসক্রো সেবা’ সরবরাহের জন্যও কাজ করছে, যার মাধ্যমে গ্রাহক, বিক্রেতা এবং বিতরণকর্মীরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে বলে জানান তমাল।

এসব কাজ বাস্তবায়ন হওয়ার আগ পর্যন্ত, অনলাইন থেকে পণ্য ক্রয়ের আগে উক্ত ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের ট্র্যাক রেকর্ড যাচাই এবং তারা ই-ক্যাবের সদস্য কিনা সেটি যাচাই করে নিতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেন আবদুল ওয়াহিদ তমাল।

সূত্র:ইউএনবি