কে হচ্ছেন পাবনা পৌর পিতা ?

কে হচ্ছেন পাবনা পৌর পিতা ?

আলী মুর্তজা বিশ্বাস সানি, শরীফ উদ্দিন প্রধান, নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা ও চৌধুরী মোহাম্মদ মাহবুবুল হক

সংঘাত-সহিংসতার কোন ঘটনা না ঘটলেও  প্রচারণার শুরু থেকেই অজানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই আগামী শনিবার (৩০ জানুয়ারি) পাবনা ও সুজানগর পৌরসভা ভোট। এরই মধ্যে প্রচারণার শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটান প্রার্থীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটররাও দলীয় পক্ষ নিয়ে বিরামহীন প্রচারণায় সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি আমেজ। শহরের রাজপথ থেকে শুরু করে সর্বত্রই চলে প্রচারণা।  প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটের প্রচারণার কারণে ধর্মীয়সভাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রচারণা ম্লান হয়ে যায়। যে যেভাবে পেরেছেন ভোটারদের ভোট আদায় করতে মরিয়া।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের অলিগলিতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকেন সব প্রার্থী। তবে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সাধারন ভোটারদের মধ্যে ততই সংশয় বাড়ছে। কারন,পাবনা পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ, স্বতন্ত্র ও বিএনপি প্রার্থীর ঘোষিত ইশতেহারে অঙ্গীকারে কোন বিষয় বাদ যায়নি। যেসব বিষয় পৌরবাসী কোনদিন জানতে পারেনি; ইশতেহারে তাও জানতে পেরেছেন।

পাবনা পৌরসভায় ৫ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। দলের মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত ও নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নৌকার মেয়র প্রার্থী আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনি বলেন, উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আগামী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিকল্প নেই। এই নির্বাচনের সবাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। সব বাধা অতিক্রম করে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিজয় লাভ করবে।

অপরদিকে পাবনা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের শরিফ উদ্দিন প্রধান বলেন, আমরা দলের বিরুদ্ধে না। দলের ক্রান্তিকালে দলের জন্য জীবন বাজি রেখেছি। আজ হাইব্রিড ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চান। তার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। আমরা দলের সবাই ওই হাইব্রিড প্রার্থীকে বয়কট করেছি। দলের সবাই আমাকে সমর্থন দিয়ে মেয়র প্রার্থী করেছেন। আগামী নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে এই পৌরবাসীর চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা হবে।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ভিপি নূর মোহম্মদ মাসুম বগা। তার প্রচারণা চলছে ব্যাপকভাবে। আওয়ামীলীগের দু’প্রার্থী থাকায় ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে বিএনপি। 

এছাড়াও জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকী নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মোঃ মাহাবুবুল হক রাজন ও হাতপাখা প্রতীকী নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তবে আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এছাড়াও এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। পাবনা পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ২৪৪ জন। পুরুষ ভোটার ৫৪ হাজার ২০৪ জন এবং নারী ভোটার ৫৮ হাজার ৪০ জন।  পৌরসভায় ৩৯টি কেন্দ্রের ৩৪৬ কক্ষে  ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন।

যাই হোক পাবনা পৌরবাসী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।  সুজানগর পৌরসভায় দু’জন মেয়র প্রার্থীসহ সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন লড়াই করছেন। 

এখানে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের অবস্থান সুদৃঢ়। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী কামরুল হুদা (কামাল পাশা) এর প্রচারণারও কমতি নেই। তবে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে পাবনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী।  নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সুজানগর পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা বিশ হাজার ৪শ’ ৮৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দশ হাজার ২শ ৬১ এবং মহিলা ভোটর দশ হাজার ২শ’ ২৩।  কেন্দ্র ১০টি।

পাবনা ও সুজানগর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পাবনা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে থাকবে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। থাকবে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থাও। তিনি বলেন,  কেও ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।