এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে টিআইবির ১৫ সুপারিশ

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে টিআইবির ১৫ সুপারিশ

ছবি সংগৃহিত।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ বুধবার দুপুরে ধানমন্ডির টিআইবির মেঘমালা মিলনায়তনে ‘ঢাকা শহরের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ পেশ করেন এর নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবি বলছে, সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে সকল অংশীজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করতে হবে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে মশা নিধনে নিজস্ব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সকল প্রকার পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন এডিস মশার উৎস নির্মূল করা ও পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক ব্যবহার। বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

আইন সংস্কার
পাশাপাশি প্রচলিত আইন সংস্কারেরও আহ্বান জানায় টিআইবি। তারা জানায়, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নির্মাণাধীন ভবন, নির্মাণ প্রকল্প ইত্যাদি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যেমন রিহ্যাব, হাউজিং এস্টেট কোম্পানি ইত্যাদি কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব কর্তব্য কী হবে তা সংশ্লিষ্ট আইনগুলোতে স্পষ্ট করতে হবে। দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যত্যয়ে শাস্তিমুলক ব্যবস্থার বিধান রাখতে হবে।

এডিস মশা জরিপ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিতকরণ, ডেঙ্গুর আগাম সতর্কতা
টিআইবি জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রকে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেখানে সকলের প্রবেশের সুযোগ থাকবে। ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে সিটি কর্পোরেশন এবং দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইইডিসিআর ইত্যাদি দফতরের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই সিটি সিটি কর্পোরেশনগুলো সব হটস্পট চিহ্নিত করবে এবং এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করবে। এডিস মশার জরিপ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সহায়তা নেয়া যেতে পারে।

জনসংখ্যা ও প্রশিক্ষণ
তারা জানায়, জনসংখ্যা, আয়তন, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে মাঠ পর্যায়ের জনবলের চাহিদা নিরূপন ও চাহিদার ভিত্তিতে নিয়োগ, আউটসোর্সিং বা জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত ও সুষম বরাদ্দ দিতে হবে। সেই সাথে মশা নিধন কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে এডিস মশা নির্মূলের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানায় তারা।

কীটনাশক ও উপকরণ ক্রয়
উপযুক্ত কীটনাশকের চাহিদা নির্ধারণ, ক্রয়, কার্যকারিতা ও সহনশীলতা পরীক্ষা জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং সভাগুলোর কার্যবিবরণী প্রকাশ করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে কীটনাশক ক্রয় প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রয় আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে। মশা নিধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি দায়িত্বে অবহেলার বিষয়গুলো তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

কীটনাশকের মান ও কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা পরীক্ষা
মশার কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা রোধ করার জন্য কিছুদিন পরপর যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কীটনাশক পরিবর্তন, একেক এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তৃতীয় পক্ষ- যেমন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা কর্তৃক মশার কীটনাশক প্রতিরেধী ক্ষমতা এবং মশা নিধন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের কীটতত্ত্ববিদসহ বিশেষজ্ঞ শূন্যপদগুলো পূরণ করতে হবে। পদ না থাকলে পদ সৃষ্টি করতে হবে।