ফল প্রকাশের পর জানা গেল আবেদনের যোগ্যতা ছিলনা পরীক্ষার্থীদের

ফল প্রকাশের পর জানা গেল আবেদনের যোগ্যতা ছিলনা পরীক্ষার্থীদের

ফল প্রকাশের পর জানা গেল আবেদনের যোগ্যতা ছিলনা পরীক্ষার্থীদের-

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও আবেদনের যোগ্যতা ছিল না জানিয়ে সাত শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। ফলে পরীক্ষা দিয়ে পাশ নম্বর পেয়েও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন না এসব শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে পরীক্ষার পর বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় দেড় মাস পর গত সোমবার রাতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে কতৃপক্ষ। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী ১৩ টি বিভাগে এমফিল কোর্সে ৩০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জন এবং পিএইচডিতে ৪৬ জনের মধ্যে ৩৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাত জনের পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা ছিলনা বলে তাঁদেরকে অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই শিক্ষার্থীদের কয়েকজন পাশ নম্বর পেলেও আবেদনের শর্ত পূরণ না হওয়ায় বাদ দেওয়া হয়। 

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁরা বিভাগের সাথে কথা বলে ও বিভাগের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী একবছর আগেই আবেদন জমা দিয়েছিলেন। বিভাগ থেকে তাদেরকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আহবান জানানোর পরেই তাঁরা পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষায় পাশ নম্বর পাওয়ার পরেও এ ভাবে বাদ দিয়ে তাদের সাথে অবিচার করা হচ্ছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তাঁরা।

জানা যায়, গবেষণার জন্য স্নাত্ক ও স্নাতকোত্তর বা সমমানদের সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে সিজিপিএ ৩.৫০ থাকার শর্ত রয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ফাজিল ও কামিলে সিজিপিএ ৫ এর মধ্যে পরীক্ষা হলেও সার্কুলারে তাদের জন্য আলাদা সিজিপিএ শর্ত ছিলনা। তাই বিভাগের নির্দেশনায় তাঁরা একই সিজিপিএ নিয়ে আবেদন করে। পরবর্তীতে ফল প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাইকালে রেজাল্টের সমতা করায় কম রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও শর্ত অনুযায়ী প্রকাশিত প্রর্যাপ্ত গবেষণা প্রবন্ধ না থাকা ও আবেদন ফর্মে অসঙ্গতির জন্য শিক্ষার্থীদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষা কমিটি (পিএটিসি) সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হলেও এবার করোনার জন্য স্ব-স্ব বিভাগ পরীক্ষা নিয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পূর্বেই কেন্দ্রীয়ভাবে আবেদনকারীদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এবার এটা বিভাগের দায়িত্বে ছিল। পরে ফল প্রকাশের আগে পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হলে দেখা যায় ওই সাত শিক্ষার্থী শর্ত পূরণ না করেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। 

এ দিকে শর্ত পূরণ না হওয়ার বিষয়টি পরীক্ষার আগে না জানিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। হামিদুর রহমান নামের ভূক্তভোগী এক এমফিল ভর্তি পরীক্ষার্থী বলেন, আমরা এক বছর আগে আবেদন জমা দিয়েছিলাম। যদি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা না থাকে  তাহলে এতদিন আগে আবেদন করা সত্বেও পরীক্ষার আগে কেন বলা হলো না? আমি সুদূর কক্সবাজার থেকে ক্যাম্পাসে গিয়ে কষ্ট করে কয়েকদিন থেকে পরীক্ষা দিয়েছি এখন হঠাৎ করে আমাদের বাদ দেওয়া হলো এটা মানা যায় না। এটা আমাদের সাথে চরম অবিচার। 

এ বিষয়ে পিএটিসি কমিটির সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছিল যাঁরা আবেদনের শর্ত পূরণ করবে শুধু তাঁদের পরীক্ষা নিতে। আবেদনের যোগ্যতা যাচাইয়ের দায়িত্বও ছিল বিভাগের। কিন্তু বিভাগ সঠিকভাবে যাচাই না করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজিমুদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া সার্কুলারে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সিজিপিএ ৫ এর মধ্যে কত পেতে হবে এটি আলাদাভাবে উল্লেখ ছিল না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা অনার্স মাস্টার্সের সমমান হওয়ায় একই রেজাল্ট দিয়ে আবেদন করেছে। আমরাও সার্কুলার অনুযায়ী পরীক্ষায় নিয়েছি। 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, করোনার কারণে তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তাই ফল প্রকাশের আগে আবারও যাচাই করা হয়। এ সময় শর্ত পূরণ না থাকায় কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা যথাযথ ফোরামে আলোচনা করেই করা হয়েছে। শুধু পরীক্ষা সম্পন্ন নয় যদি ফল প্রকাশ করা হতো বা তাঁরা চাকরিও পেত তবুও শর্তের ঘাটতি প্রমাণ হলে ফল বাতিল করা হতো।