ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

ডায়াবেটিসের লক্ষণ

সম্পর্ক মধুর হওয়া ভালো তবে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। আর এই কারণে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা বোঝার জন্য কিছু লক্ষণের দিকে খেয়াল করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা: দিনা আদিমুলাম বলেন, ডায়াবেটিস কেন হয়, এর লক্ষণ কী- এগুলো জানা এবং নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এই চিকিৎসক আপরভ বলেন, মহামারীর এই সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে আছেন কি না তা জানা জরুরি। কারণ এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, দেহে তৈরি করে নানান সমস্যা।
প্রচণ্ড তৃষ্ণা ও ঘন ঘন মূত্রত্যাগ : ডা: আদিমুলাম বলেন, পলিডিপসিয়া বা তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া আর পলিইউরিয়া বা অত্যধিক মূত্রত্যাগ দুটোই ডায়াবেটিসের বেশ পরিচিত পূর্বাভাস। এই দুটোর পেছনের কারণ হলো বৃক্ক, যার কাজ গ্লুকোজ শোষণ পরিশোধন করা। ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজের মাত্রা থাকে বেশি যা ডাই-ইউরেটিক হিসেবে কাজ করে মূত্র উৎপাদন বাড়িয়ে। আর এই একটি কারণে মূত্রত্যাগের মাত্রা বাড়ে এবং তৃষ্ণাও বাড়ে।
ক্ষুধাভাব বেড়ে যাওয়া : অনেকক্ষণ না খেলে কিংবা প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রমের পর ক্ষুধা অনুভব করা স্বাভাবিক। তবে কোনো কারণ ছাড়াই দিনের অধিকাংশ সময় ক্ষুধা অনুভব করা কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
ডা: আদিমুলাম বলেন, ডায়াবেটিস রোগটি মূলত ইনসুলিন নামক হরমোনের সমস্যা। শরীরের কোষের মধ্যে গ্লুকোজ প্রবেশ করে তা কর্মশক্তি হিসেবে ব্যবহার হওয়ার জন্য এই হরমোন জরুরি। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়ার সমস্যা হয়। আর টাইপ টু ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু তা সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না।
কোষ যখন শক্তির জন্য গ্লুকোজ পায় না, তখনই সব সময় ক্ষুধা অনুভূত হতে থাকে। তবে যতই খাওয়া হোক না কেন কোনো লাভ হয় না। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় পলিফাজিয়া। যে কারণে ওষুধ ব্যবহার করে কোষে গ্লুকোজ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই সমস্যার পেছনের কারণ হলো রক্তে শর্করার মাত্রার তারতম্য। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে চোখের লেন্সে পানি জমে তা ফুলে যায়। আবার চোখের রেটিনা বা অক্ষিপটের রক্তনালী দুর্বল পাতলা কিংবা একেবারে নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এসব কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
ক্লান্তি অনুভব করা : রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দেখা দেয় হাইপারগ্লাইসেমিয়া। এর কারণে বমিভাব হয়, মুখে দুর্গন্ধ হয়, দম আটকে আসে, মুখ শুকিয়ে যায় এবং দেখা দেয় বিনা পরিশ্রমে প্রচণ্ড ক্লান্তি।
ডা: আদিমুলাম বলেন, ডায়াবেটিস রোগী শরীরের বাড়তি শর্করা বা গ্লুকোজ কাজে লাগাতে পারে না। আর একারণেই রোগী সব সময় ক্লান্তি অনুভব করে।
ক্ষত সারতে অস্বাভাবিক বেশি সময় লাগা : হাত পা নানান কারণে কেটে কিংবা ছিলে যায়। সুস্থ কিংবা অনেক অসুস্থ মানুষের জন্যও তা কোনো সমস্যা নয়, কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে ওঠে। তবে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য তা প্রযোজ্য নয়। সামান্য কাটাছেঁড়া ভালো না হয়ে উল্টো ইনফেকশন হয়ে বিশাল আকার ধারণ করে। এমনকি অনেকের অঙ্গহানিও ঘটতে দেখা যায়।
ডা: আদিমুলাম বলেন, রক্তে শর্করার মাত্রা আর ক্ষত সেরে যাওয়ার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে। শরীরের গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল ভালো না হলে সামান্য ক্ষত মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালীর রোগ দেখা দেয়। এ কারণে রক্তনালীর মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ সীমাবদ্ধ হয়ে যায় আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতস্থান সেরে যাওয়ার গতি অত্যন্ত মন্থর হয়।
হাত-পায়ের আঙুলে অসাড় অনুভূতি : হাত কিংবা পায়ের আঙুলে অবশ কিংবা সুই ফোটানোর মতো অনুভূতি ডায়াবেটিস রোগের পূর্বাভাস। এর কারণ হলো ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি- স্নায়ুর এই রোগ প্রায় ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীকে আক্রমণ করে, দাবি মেয়ো ক্লিনিকের।
মেয়ো ক্লিনিকের মতে, অস্বাভাবিক অনুভূতির পাশাপাশি থাকতে পারে ব্যথাও। আবার দেখা দিতে প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি বা ডায়াবেটিক পলির্যাডিকুলোপ্যাথি। এই রোগগুলো আক্রমণ করে পা, পায়ের উরু, নিতম্ব, পেট এবং বুকে।
ত্বকের কালো ছোপ : ডা: আদিমুলাম বলেন, ত্বকে কালো ছোপ পড়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় অ্যাকানথোসিস নিগ্রিকানস। ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস হওয়ার পাশাপাশি কিছু বিরল ক্ষেত্রে ক্যান্সারের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা দেয় এই সমস্যা। সাধারণত ঘাড়ের পেছনে আর বগলের নিচে তা দেখা যায়। এর কারণ হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারার কারণে অতিরিক্ত ইনসুলিন বিশেষ ধরনের ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

 ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত