করোনার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ

করোনার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ

করোনার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে ও সদস্যদের উপস্থিতিতে ৩৪ তম অনলাইন সভায় এই সুপারিশ করা হয়।

মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতালির করোনা রোগীর পোস্ট মর্টেম সংক্রান্ত একটি তথ্যসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নিয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উদ্বৃতি দিয়েও বিভিন্ন ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়। সভা মনে করে প্যানডেমিকের সময় এই ধরনের ‘ইনফোডেমিক’ জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি স্বরূপ হতে পারে। জাতীয় কমিটি এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কোনো প্রচারে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

সরকার আরো এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ বাড়িয়েছেন। কমিটি বিধিনিষেধের প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ঈদ পূর্ববর্তী যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। ঈদের পরে একইভাবে মানুষ ফিরে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। ঈদের পরে কলকারখানা পর্যায়ক্রমে খোলা হলে জনসাধারণকে এক যোগে ঢাকায় ফিরতে হবে না। কমিটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধি নিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের অংশ গ্রহণ নিশ্চত করা প্রয়োজন বলে সভা মনে করে।এ ছাড়াও এসকল বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিভিন্ন অংশীজনদের সহযোগিতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ বিশেষ প্রয়োজন।

ভারত থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। ১৪ দিন পর পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দেয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া বর্ডার এলাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিক যাতায়াত কঠোরভাবে বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সাথে সীমান্তে চলাচল বন্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।

সভায় হাসপাতাল সমূহে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কমিটি এই সব পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে। কমিটি মনে করে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করে পরনির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। সকল জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়। এছাড়াও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও মারাত্মক রোগীর চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর ছাড়াও বাই প্যাপ, সি প্যাপ ও হাই ফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা সকল জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সংযোগ করা প্রয়োজন।

স্বল্প মূল্যে মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বুয়েটের একটি গবেষকদলের প্রয়াসকে অভিনন্দিত করা হয়। এই কার্যক্রমে সরকার পৃষ্ঠপোষকতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এটি দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর এবং এর সফল বাস্তবায়ন পরনির্ভরশীলতা কমাতে ভূমিকা রাখবে।

সভায় শ্রীলঙ্কা টিম বাংলাদেশে আসা ও খেলা অনুষ্ঠান বিষয়ে আলোচনা হয়। অনুশীলন ও খেলা চলাকালীন সময়ে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়।

বৈশ্বিক সংকট এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ও বিকল্প অনুসন্ধান করছে। প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহের ভিতরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়া যায়, কোন কোন দেশ ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান করছে। এই ব্যাপারে সকলকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগকেও এ ব্যাপারে টিকার পরিস্থিতি ও সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা জনগনকে অবহিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। ভ্যাকসিনের জন্য পরনির্ভরতা কমাতে উৎপাদনের জন্য দ্রুত সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে কমিটি মতামত ব্যক্ত করে।

সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোভিড-১৯ পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

সূত্র : ইউএনবি