অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে ইতালি

অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে  ইতালি

অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে ইতালি

ফেদেরিকো কিয়েসার বাবা এনরিকো একসময়ে রবার্তো ম্যানচিনির সঙ্গে খেলেছেন সাম্পদোরিয়ায়। এক সাক্ষাৎকারে এনরিকো একবার বলেছিলেন, “আমার যখন ১৮ বছর বয়স, তখন ম্যানচিনির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। তার পর আমার জীবনের অনেকটা জুড়েই ছিল ম্যানচিনি।” 

বন্ধুর ছেলে এখন জাতীয় দলে ম্যানচিনির ছাত্র। ইউরো কাপের প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে সেই এনরিকোর ছেলে ফেদেরিকো কিয়েসাই স্বস্তি এনে দেন ম্যানচিনিকে। যে ইতালি গ্রুপ পর্বে দুদ্দাড়িয়ে জিতে নক আউটে এসেছে, তাদেরই কিনা শেষ ষোলোয় ৯৫ মিনিট পর্যন্ত আটকে রেখেছিল অস্ট্রিয়া। কিয়েসার দারুণ সুন্দর গোলটা স্বস্তি এনে দিল রোমে। ওই গোলে ম্যানসিনির মুখে খেলে গিয়েছিল হাজার ওয়াটের আলো। ১০৫ মিনিটে পেসিনার গোলের পর ম্যানচিনি যেন মেঘের উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে দেন। দু’জনকেই পরিবর্ত হিসেবে মাঠে এনেছিলেন ইতালির কোচ।ধুরন্ধর ম্যানচিনি যে তাঁদের নামিয়ে ভুল করেননি, তা প্রমাণ করে দেন দুই ছাত্র- কিয়েসা এবং পেসিনা। 

কথায় বলে, রেকর্ড গড়া হয় ভাঙার জন্যই। ওয়েম্বলিতে নতুন রেকর্ড গড়ল ম্যানচিনির দল। ৫৬ বছর বয়সি কোচের হাতে পড়ে বদলে গিয়েছে আজুরিরা। ইনসিনিয়ে, ইমমোবিলেরা নিজেদেরই ৮২ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট জোগাড় করে নিল। 

১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ইতালি । এবারের ইউরোয় ম্যানচিনির ইতালি গ্রুপ পর্বের তিন-তিনটি ম্যাচ জিতেই সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছিল। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে ৩১ ম্যাচ অপরাজিত চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্তুগালের কাছে শেষবার হেরেছিল ইতালি। তার পর থেকে অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটেই চলেছে।

অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে গেল ঠিকই ইতালি। কিন্তু ৯০ মিনিটে গোল করতে পারেনি নীলজার্সিধারীরা। গ্রুপে তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, ওয়েলস খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল ইতালির আক্রমণে। সেখানে অস্ট্রিয়া দেখিয়ে দিল এই ইতালিকেও আটকে দেওয়া সম্ভব। ৯০ মিনিট অবধি কোনও দলই গোল করতে না পারায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। চিত্রনাট্য বদলে গেল তার পরেই। টগবগ করে ফুটতে থাকা কিয়েসা ও বেলোত্তিকে পরিবর্ত হিসেবে নামান ম্যানচিনি। সেই সময়ে তাজা রক্তের দরকার ছিল ইতালির। ম্যানচিনির মোক্ষম অস্ত্রেই নকআউট অস্ট্রিয়া। 

গ্রুপ পর্বে ফ্রি ফ্লোয়িং ফুটবল দেখিয়েছিল ইতালি। নদীর জল যেমন প্রবহমান, তেমনই ইতালির আক্রমণ। এই ইতালি মানে কেবল ডিফেন্স, ডিফেন্স আর ডিফেন্স নয়। রক্ষণ আর আক্রমণের মিশেলে অন্য ধাতুতে গড়া একটা দল। ম্যানচিনির দর্শন হল, যত পারো গোল করো। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে অবশ্য ইতালি জিতল ২-১ গোলে। যদিও স্কোরলাইন আরও হৃষ্টপুষ্ট হতেই পারত। প্রথমার্ধেই সব ঠিকঠাক থাকলে দু’গোলে এগিয়ে যেতে পারত ইতালি। ইনসিনিয়ের গড়ানে ক্রস থেকে বারেলার শট থামিয়ে দেন অস্ট্রিয়ার গোলকিপার ড্যানিয়েল। শট করার আগের মুহূর্তে বল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি বারেলা।

ইমমোবিলের ডান পায়ের জোরালো শট অস্ট্রিয়ার পোস্টে চুম্বন করে বেরিয়ে যায়। ইতালির ফুটবলে পাসের আধিক্য। পাসের মালা গেঁথে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বল ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন বারেলা, ইনসিনিয়ে, ভেরাত্তিরা। আর অস্ট্রিয়া নিজেদের পেনাল্টি বক্সে লোক বাড়িয়ে ইতালির শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছিল। ইমমোবিলের শটের আগে ভুল করে ফেলে অস্ট্রিয়ানরা। শট করার সময় দিয়ে ফেলেছিলেন ইমমোবিলেকে। সেযাত্রায় ভাগ্য খারাপ ইমমোবিলের।

ম্যানচিনির ইতালি অনেকটা ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ‘আজুরি’রা বল নিজেদের দখলে রাখছে বেশিরভাগ সময়। বলের নিয়ন্ত্রণ হারালে সঙ্গে সঙ্গে তা কেড়েও নিচ্ছে বিপক্ষের কাছ থেকে। দুটো কাজই দক্ষভাবে করায় ইতালিকে অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে। নীল জার্সিধারীদের থামানোর জন্য দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকের উপরে নির্ভর করেছিল অস্ট্রিয়া। প্রথমার্ধে সেরকম সুযোগ একটা পায়নি অস্ট্রিয়া। ইতালির হাই লাইন ডিফেন্স ভাঙা সম্ভব হয়নি আলাবাদের পক্ষে।

দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অন্য ছবি। শুরু থেকেই আক্রমণের রাস্তা নেয় অস্ট্রিয়া। একবার তো গোলও করে ফেলেছিলেন মার্কো আরনোটোভিচ। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা যায় তিনি অফসাইডে ছিলেন। অস্ট্রিয়ানরা অপেক্ষা বাড়াচ্ছিলেন ইতালির। এক্সট্রা টাইমে কিয়েসা ও পেসিনা ম্যাচ নিয়ে যান নিজেদের সাজঘরে। অস্ট্রিয়ার সাসা গোল করে ব্যবধান কমিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু ওয়েম্বলিতে দিনটা যে ছিল না অস্ট্রিয়ার।

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন