ভুটানে ৯০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকাদান সম্পন্ন

ভুটানে ৯০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকাদান  সম্পন্ন

ভুটানে ৯০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকাদান সম্পন্ন

হিমালয় রাষ্ট্র ভুটান তার মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের টিকা দেয়া পুরপুরি সম্পন্ন করেছে মাত্র সাত দিনে। ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত আট লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট এ দেশটিতে ২০শে জুলাই থেকে শুরু হয় টিকার দ্বিতীয় ডোজ। ইউনিসেফের মতে “এটি সম্ভবতঃ গোটা মহামারি সময়কালের সবচেয়ে দ্রুত টিকা কার্যক্রম”।

গত এপ্রিল মাসে ভারতের কাছ থেকে ৫৫০,০০০ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পাবার পর ভুটান সরকার বলেছিল যে পরিমাণ টিকা পাওয়া গেছে সেই পরিমাণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। এটি সেই সময়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। তবে কয়েকমাসের মধ্যে ভুটান টিকার সংকটে পড়ে যখন ভারত নিজ দেশে ক্রমবর্ধমান করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে টিকা রপ্তানি থামিয়ে দেয়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতিসংঘের কোভাক্স কর্মসূচীর আওতায় ভুটানকে পাঁচ লাখ মডার্না টিকা দেয়ার পর দেশটিতে আবারো টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। কোভাক্স কর্মসূচীর আওতায় ফাইজারের আরও পাঁচ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয় ভুটানকে। দেশটি গত দুই সপ্তাহে ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আরও চার লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পান।

বহু পশ্চিমা দেশ এখনো তাদের দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়ার হিসাবে পিছিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভুটানের জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে কাজটি সহজ হয়েছে। তবে দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জোরালো এবং কার্যকর বার্তা এবং প্রতিষ্ঠিত হিমায়ন পদ্ধতি এতে অনেক সহায়ক হয়েছে।

দেশের ১২০০ টিকা কেন্দ্রে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী টিকা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং তাঁরা নিশ্চিত করেছেন যেন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক জনগণ টিকা নেন। ভুটান সরকার চিকিৎসা পেশাজীবীদের দিয়েও পরিচালিত হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকলেই চিকিৎসক। সরকারের তরফ থেকে বারবার ফেসবুকে বার্তা দেয়া হয়েছে এবং তাতে করোনাভাইরাস ও টিকা সম্পর্কে জনগণের প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। তাছাড়া টিকা সম্পর্কে যাদের মধ্যে শঙ্কা ছিল তাও দূর হয়েছে।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটায় টিশেরিং এবং রাজা জিগ্মে খেসার নামগাইল ওয়াংচুক প্রথম থেকেই টিকার পক্ষে কথা বলেছেন। এতে করে মানুষের মাঝে আশংকা কেটেছে। টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে, মানুষদেরকে সচেতন করতে, রাজা দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করেছেন।হিমালয় অঞ্চলে ভুটান হচ্ছে শেষ বৌদ্ধ রাজত্ব। তবে সম্পূর্ণ রাজতন্ত্র থেকে দেশটি গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।

ভুটানে ইউনিসেফ প্রতিনিধি ডাঃ উইল পার্কস বলেন, ভুটানের সফল টিকা কার্যক্রমের সহায়ক আরেকটি বিষয় হচ্ছে ‘দেসাপ’ নামের নাগরিক স্বেচ্ছাসেবীদের নেটওয়ার্ক। প্রায় ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী গত দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস, টিকা,তথ্য বিভ্রাট দূর করা, করোনা পরীক্ষা, এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে টিকা পৌঁছানো এবং মানুষদেরকে সচেতন করতে কাজ করেছেন।ভুটানের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ব্যাতিক্রম, যেখানে ভারত ও বাংলাদেশ টিকা কার্যক্রম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকা অনুদান বাড়ালে, সরকার এবং সম্প্রদায় কিভাবে তা সফল করতে পারে সেটা বোঝা যায়।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা