ফোনে আড়িপাতা বন্ধে রিটের শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল

ফোনে আড়িপাতা বন্ধে রিটের শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল

ফোনে আড়িপাতা বন্ধে রিটের শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল

ফোনালাপে আড়িপাতা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর শুনানি দুই সপ্তাহ পিছিয়ে (স্ট্যান্ডওভার) মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহ পরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন।

সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আদেশের বিষয়ে নিশ্চিত করে রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদপুর শিশির মনির বলেন, ‘আজ রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দুই সপ্তাহের সময় আবেদন করা হয়। ওনারা বলেছেন, যেহেতু রিটে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি রয়েছে এসব দেখতে হবে, অ্যাটর্নি জেনারেল অংশগ্রহণ করবেন, তাই সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রিট শুনানি দুই সপ্তহ মুলতবি করেছেন।’

এর আগে গত ১০ আগস্ট ফোনালাপে আড়িপাতা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিটে আড়িপাতা প্রতিরোধে নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট আবেদন করেন।রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘এর আগে গত ২২ জুন এ বিষয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। নোটিশের কোনো জবাব না পাওয়ায় রিট দায়ের করা হয়েছে।’

এতে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ১৬টি আড়িপাতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। রিটে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র এবং যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাই এটি বন্ধ হওয়া উচিত।

রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) বিবাদী করা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবীরা হলেন, অ্যাডভোকেট রেজওয়ানা ফেরদৌস, অ্যাডভোকেট উত্তম কুমার বণিক, অ্যাডভোকেট শাহ নাবিলা কাশফী, অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নওয়াব আলী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), অ্যাডভোকেট ইমরুল কায়েস ও অ্যাডভোকেট একরামুল কবির।

এর আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে এই ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু নোটিশ পাওয়ার পরও ওই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, পরলোকগত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীসহ ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০টি আড়িপাতার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে রিট আবেদনে।’

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘আড়িপাতার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ সার্বজনীন মানবাধিকার সনদপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সব আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ৩০(চ) ধারা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা এই কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, এই ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।’

রিটকারী আইনজীবী আরো বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. শওকত হোসাইন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মবিনের গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এ বিষয়ে রায় দিয়েছেন।’এই রায়ে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও টেলিফোন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য দিতে পারে না।