ইবির ছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, ক্যাম্পাসে তোলপাড়

ইবির ছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে  আপত্তিকর পোস্ট, ক্যাম্পাসে তোলপাড়

ইবির ছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, ক্যাম্পাসে তোলপাড়

ইবি প্রতিনিধি :ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৭৩ জন ছাত্রী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংবলিত একটি পেজ আপত্তিকর ক্যাপশনসহ ভুক্তভোগী ছাত্রীদের ছবি প্রকাশ করা হয়। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। শনিবার ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, “Crush & Confession, Islamic University, Bangladesh” নামের ফেইসবুক পেইজ থেকে ওই পোস্টটি করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘ইবি কাঁপানো সকল সুন্দরী একসাথে, ইমো নাম্বার পেতে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে সঙ্গেই থাকুন।’ নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ইমো নাম্বার সরবরাহের এমন পাবলিক পোস্ট দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে। পরে সমালোচনামূলক মন্তব্য আসতে দেখে রাত ১২ টার দিকে পেইজ থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং পোস্টের ক্ষমা চায় পেজ কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেইজের ক্রিয়েটর এবং একমাত্র এডমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজান বিশ্বাস। তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও স্থানীয় খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য। তার এই কর্মকাণ্ডে বিব্রত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।

এ দিকে, এ ঘটনায় শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিজিতা আবৃত্তি নামের এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ওই শিক্ষার্থী সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তুলে অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তির দাবির পাশাপাশি এ জাতীয় কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডি থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পাশাপাশি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই আমার ছবিসহ ৭০-৭৫ জন মেয়ের ছবি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পেজে অশ্লীল ঈঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেখে হতবাক হয়ে গেছি। ইবির নামে খোলা ফান পেজে কিভাবে এতগুলো মেয়ের ছবি ব্যবহার করে তাদের ইমো নম্বর দিতে চেয়ে পোস্ট করতে পারে এডমিনরা? প্রশাসন আগেকার হয়রানির ঘটনার বিচার করেনি জন্য এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে।'

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী  জি কে সাদিক বলেন, ‘এই পেইজ থেকে এর আগেও অসংখ্যবার বিভিন্ন মেয়েকে নিয়ে নোংরামি পোস্ট করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা এতো নোংরা আর নিচু হয় কি করে ভেবে শিউরে উঠি। এই পেইজ থেকে যা করা হয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজান বিশ্বাস বলেন, 'এটা ডাবল মিনিংয়ের পোস্ট। ফান করে দিয়েছি। ইমু নাম্বার দেয়া তো ভাইরাল ডায়লগ। তবুও আমার ভুল হয়েছে; আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। কে বা কারা পেইজটি চালায় তা দেখতে আইসিটি সেলের সাথে বসবো। পরিচয় পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন,, 'আমি আইসিটি সেল কে নির্দেশ দিয়েছি অভিযুক্তকে খুঁজে বের করতে। অভিযুক্তদের কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।'

প্রসঙ্গত, এর আগেও একাধিকবার সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন ইবি শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি এক ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেও সুষ্ঠু বিচার পাননি ভুক্তভোগী ছাত্রী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে খোলা হয়েছে অসংখ্য ফেসবুক পেজ-গ্রুপ। এসব থেকে আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আনলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে এ ধরণের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।