চাটমোহরে স্কুলছাত্র হত্যা: কানের দুলে ‘খুনি’ শনাক্ত

চাটমোহরে স্কুলছাত্র হত্যা: কানের দুলে ‘খুনি’ শনাক্ত

চাটমোহরে স্কুলছাত্র হত্যা: কানের দুলে ‘খুনি’ শনাক্ত

পাবনা প্রতিনিধি:দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র ইমন হোসেন (১৬)। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় এবং বাবা জাকিরুল ইসলাম অসুস্থ হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে বই-খাতা ছেড়ে হয়েছিল সিএনজি অটোরিকশাচালক। টেনেটুনে কোনো মতে চলছিল সংসার। ইচ্ছে ছিল এবার এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু বিধিবাম, ১৮ আগস্ট বুধবার রাতে সিএনজি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রীবেশে একই এলাকার সমবয়সী কয়েকজন ইমনকে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, হত্যার পর খুনিরা সবাই নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিল এবং লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ইমনের লাশ দেখেও আসেন। এই ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলায়। ২০ আগস্ট চাটমোহর-হান্ডিয়াল সড়কের ভাঙা ব্রিজ এলাকা থেকে স্কুলছাত্র ইমনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চাটমোহর থানায় ইমনের বাবা-মাকে সঙ্গে করে পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ইমন হত্যার রহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এদিকে পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে পার পায়নি অভিযুক্তরা। ইমনের লাশ উদ্ধারের পর একে একে পুলিশের হাতে আটক হয় পাঁচজন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিমাইচড়া ইউনিয়নের চিনাভাতকুর গ্রামের নুরুজ্জামান মন্ডল, হৃদয় হোসেন, সেলিম হোসেন ওরফে জেলিম, মির্জাপুর গ্রামের হুমায়ন কবির ওরফে টুটুল এবং রাকিবুল ইসলাম। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাবনা আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা।

পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র রাতে এই প্রতিনিধিকে জানায়, ২০ আগস্ট সকালে পুলিশ যখন স্কুলছাত্র ইমনের লাশ উদ্ধার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন; তখন যেখান থেকে খুনিরা ইমনের সিএনজি ভাড়া করেছিল (মান্নাননগর) সেখানে ছুঁটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মাসুদ আলম (অপরাধ) স্নিগ্ধ আখতার (বিশেষ শাখা) ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরীন। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলা শুরু করেন এবং ওই চারজনের শারীরিক গঠনের বর্ণনা শোনেন ওই তিন কর্মকর্তা। এর মধ্যে স্থানীয় এক ব্যক্তি তথ্য দেন ইমনের সিএনজি ভাড়া করা ওই চারজনের মুখেই ছিল মাস্ক। তবে একজনের কান ফুটো করা ছিল এবং সেই ফুটোতে গহনা জাতীয় (কানের দুল) কিছু একটা লাগানো ছিল। মূলত শারীরিক গঠন এবং কানের দুলের সূত্র ধরেই পুলিশের ওই কর্মকর্তারা প্রথমে চিনাভাতকুর এলাকায় এসে স্থানীয় লোকজনকে অভিযুক্তদের শারীরিক গঠন এবং কানের দুল পরা এলাকায় কেউ আছে কিনা জানতে চান। এরপরই ইমন হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে নিজ বাড়ি থেকে প্রথমে নুরুজ্জামান নামে একজনকে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যে আটক করা হয় মূল পরিকল্পনাকারী রাকিবুলসহ আরো চারজনকে। এদের মধ্যে রাকিবুলের কানে দুল ছিল। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া সিএনজিও।

পুলিশ সুপার বলেন, ইমন উপজেলার সমাজ আশরাফ জিন্দানি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ও নিমাইচড়া ইউনিয়নের মাঝগ্রামের জাকিরুল ইসলামের ছেলে। করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় সিএনজি চালিয়ে পরিবারকে সহায়তা করত। গত বুধবার রাতে পাশের তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর এলাকা থেকে যাত্রী বেশে চারজন সিএনজি ভাড়া করে চাটমোহরে আসতে চায়। পরে ইমন সিএনজি নিয়ে চাটমোহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে চাটমোহর-হান্ডিয়াল সড়কের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকায় আসার পর পেছন থেকে হাত-পা বেঁধে ইমনকে হত্যা করে রাস্তার পাশে তার লাশ ফেলে রেখে যায় আসামিরা।

 

এর দু’দিন পর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই এলাকা থেকে ইমনের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে ছিনতাই হওয়া সিএনজি উদ্ধার করা হয়।