লাদাখ নিয়ে ভারত-চীন আলোচনা ব্যর্থ

লাদাখ নিয়ে ভারত-চীন আলোচনা ব্যর্থ

লাদাখ নিয়ে ভারত-চীন আলোচনা ব্যর্থ

লাদাখের বিতর্কিত এলাকা নিয়ে ভারত-চীন সংঘাত এখনো চলছে। দুই দেশের সেনার ১৩তম ফ্ল্যাগ মিটিংয়েও সমাধানসূত্র মিলল না।

লাদাখের দুইটি বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে রোববার প্রায় আট ঘণ্টা বৈঠক করে ভারত এবং চীনের সেনা অফিসাররা। এদিন ১৩তম ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনো সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যায়নি। ভারত এবং চীন দুই দেশই বিবৃতি দিয়ে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার কথা বলেছে। এবং একে অপরের প্রতি আঙুল তুলেছে।

লাদাখের সীমান্ত নিয়ে ভারত-চীন বিতর্ক নতুন নয়। তবে তা এক অন্য পর্যায়ে পৌঁছায় ২০২০ সালের জুন মাসে। গালওয়ানে দুই দেশের সেনার হাতাহাতিতে একাধিক ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। তারপর থেকে লাগাতার স্ট্যান্ডঅফ চলছে দুই দেশের মধ্যে। সীমান্তের দুই ধারে দুই দেশই সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।

লাদাখে ভারত এবং চীনের মধ্যে ছয়টি এলাকা নিয়ে বিতর্ক আছে। পরিভাষায় যাকে হটস্পট বলা হয়। এর মধ্যে চারটি জায়গা নিয়ে রফাসূত্রে পৌঁছানো গেলেও দুইটি অঞ্চল নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। প্যাংগং লেকের দুই প্রান্ত, গালওয়ানের মতো এলাকাগুলির সাময়িক সমাধানসূত্র মিলেছে। কিন্তু ডেপসাং এবং হটস্প্রিং অঞ্চল নিয়ে এখনো তুমুল বিতর্ক রয়েছে। এবং একবছর ধরে ওই এলাকায় দুই দেশের সৈন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

সম্প্রতি ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, এখনো লাদাখে প্রায় পঞ্চাশ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। উল্টোদিকে চীনও সীমান্তের ধারে সমপরিমাণ সেনা দাঁড় করিয়ে রেখেছে। রোববার এ বিষয়েই বৈঠক হয়েছে দুই দেশের সেনা অফিসারদের।

বৈঠকের পর ভারতীয় সেনা যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, একাধিকবার চীনকে সেনা পিছিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে গেলে সেনা পিছোতে হবে, এটাই ভারতের দাবি। কিন্তু চীন সে কথা মানতে রাজি হয়নি বলে ভারতীয় সেনার দাবি।অন্যদিকে চীনের পিপলস আর্মি  যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারত যে প্রস্তাব দিচ্ছে, তা অবাস্তব। এবং সে কারণেই বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''লাদাখের বিতর্কিত অঞ্চলগুলিতে দুই দেশের সেনাই পেট্রলিং করতে যায়। কারণ দুই তরফই ওই অঞ্চল নিজেদের বলে দাবি করে।'' বিতর্কিত অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর অর্থ, নিজেদের দাবি থেকে সরে যাওয়া। সে কারণেই চীন সেনা সরাতে চাইছে না বলে মনে করেন উৎপল।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে দুইটি অঞ্চল নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে, সেই দুইটি স্ট্র্যাটেজিক জায়গা। ভারত-চীন কোনো পক্ষই সেই স্ট্র্যাটেজিক জায়গার দখল ছাড়তে চায় না। ফলে সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

বস্তুত, প্যাংগং এবং গালওয়ান নিয়েও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বেশ কয়েকমাস স্ট্যান্ডঅফ চলার পরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করে সাময়িক সমাধানের রাস্তা খুঁজা বার করেছিলেন। কিন্তু তাতেও যে পুরো সমস্যার সমাধান হয়নি, তা স্পষ্ট। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সেনা স্তরের বৈঠক করে ওই দুইটি অঞ্চলের বিতর্ক মেটানো যাবে বলে তিনি মনে করেন না।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে