জন্ম নিবন্ধনে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে

জন্ম নিবন্ধনে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে

জন্ম নিবন্ধনে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে অভিভাবকদের নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে। কাগজগত্র ক্রুটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কোন জায়গায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে। পাবনা পৌরসভাসহ ইউনিয়নের পরিসেবাগুলোতে দৈনন্দিন মানুষের ভিড় লেগেই থাকছে নিবন্ধন জটিলতায়।

ভুল সংশোধন এবং নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে পড়তে হচ্ছে চরম বিড়ম্বনায। বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণে বেগ পেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। সংশ্লিষ্ট  পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরতে ঘুরতে ভুক্তভোগীদের জুতার তলা পর্যন্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, আগে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়েই পরিবারের অন্যদের জন্ম নিবন্ধন করা যেত। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম হওয়ায় সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আগে তাদের জন্ম নিবন্ধন করার পর সন্তানের জন্ম সনদ।

ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার বিভিন্ন অফিসে জন্মসনদ সংগ্রহে আসা অনেক ভুক্তভোগী জানান, সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহের জন্য বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন বাবা ও মায়েরা। কেননা ছেলে বা মেয়ের জন্মসনদের আবেদন করলে সেখান থেকে বলা হচ্ছে সন্তানের জন্মসনদ নেয়ার জন্য আগে বাবা ও মা দু’জনেরই ডিজিটাল জন্মসনদের কপি বা নিবন্ধন নম্বর লাগবে। আবার বাবা এবং মায়ের জন্মসনদের জন্য আবেদন করা হলে তাদের বাবা-মা অর্থাৎ দাদা-দাদী বা নানা-নানির জন্মসনদও চাওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে দাদা-দাদী বা নানা-নানী কেও মারা  গেলে তাদের মৃত্যু সনদও জমা দিতে বলা হচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, কার্যালয়গুলোতে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাগরিকদের স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন না। সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে বলে অভিযোগ সনদ নিতে আসা অনেকের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাহিদা মতো কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে নির্দিষ্ট কয়েক দিন পর জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে থাকেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের পরে জন্মগ্রহণকারীদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য পিতামাতার জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; যা অনেককে সমস্যায় ফেলেছে।আগে জন্ম নিবন্ধনের জন্য অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।

এই অভিভাবকদের একজন, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক বলেন,‘ স্কুলে ভর্তির জন্য তার মেয়ের জন্ম সনদের জন্য আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ তার জন্ম সনদ চেয়েছিল। "যখন আমি আমার জন্ম প্রশংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছিলাম, তারা আমার বাবা-মায়ের জন্ম প্রশংসাপত্রের নম্বর চেয়েছিল। আমার বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছেন এবং তাদের জন্ম প্রংসাপত্র ছিল না,।"

তিনি বলেন, নতুন নিয়ম অনুসারে ২০০১ সালের পরে জন্মগ্রহণকারী তাদের সন্তানদের জন্ম সনদের জন্য অনলাইনে আবেদন করার আগে অভিভাবকদের অবশ্যই তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে, তবে সেই সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেককে। 

এছাড়াও অন্যান্য সমস্যাও আছে। আটঘরিয়ায় সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে আসা এক ব্যক্তি জানান, তার জন্ম সনদ ইংরেজিতে এবং স্ত্রীর বাংলায় থাকায় তারা আবেদন করতে পারেননি। "আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে এই নতুন সিস্টেমে যেতে হবে। বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট ইংরেজিতে থাকলে সন্তান ইংরেজিতে জন্ম সনদ পাবে। বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট বাংলায় হলে সন্তানের সার্টিফিকেটও বাংলায় হবে। কিন্তু যদি দু’টি সার্টিফিকেট ভিন্ন ভাষায় হয়, তাহলে তারা তাদের সন্তানদের জন্ম সনদের জন্য আবেদন করতে পারবে না, জন্মনিবন্ধন পরিসেবা  কেন্দ্রের এক কর্মী ব্যাখ্যা করেছেন।

"অভিভাবকদের অবশ্যই একই ভাষায় সার্টিফিকেট পেতে হবে। তবেই তারা তাদের সন্তানদের সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন," বলেন ওই কর্মী।পাবনা সদরে বসবাসকারী একজন চাকরিজীবী বলেন,‘ তার এবং তার স্ত্রীর জন্ম সনদ নেই এবং তারা যখন তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন কাগজপত্র পেতে বলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, "অনেক ঝামেলার পর আমরা আমাদের বাড়িওয়ালার কাছ থেকে এনআইডি কার্ড এবং পানির বিলের কপি জমা দিয়েছিলাম। তারপর আমাদের নিবন্ধন করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধন না করেই ইউনিয়ন পরিষদ অফিস থেকে ফিরে আসছেন, কারণ তাদের নিজের কাছে সনদ নেই। জন্ম নিবন্ধন করতে আসা বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন,নির্ধারিত ফি আদায়ে সরকারি নির্দেশনা মানছে না জেলার বিভিন্ন উপজেলার আওতাধীন অনেক ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউপি কেন্দ্রের তথ্য সেবা কেন্দ্র। এমন অভিযোগ অনেকের। সরকারের নির্ধারিত ফি থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়েও সময় মতো জন্মনিবন্ধনপত্র পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের।

পাবনা পৌরসভার মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান বলেন,‘সার্ভার সমস্যাসহ বিভিন্ন স্তর পার হওয়ার কারনে জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে দেরি হচ্ছে। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন,‘যেমন ভুল জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলার নিকট থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে অনলাইনে আবেদন করার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কিলিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) পেলেই জন্মসনদ পাওয়া যায়। এগুলো করতে যতটুকু সময় লাগছে; সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার শিশু জন্ম গ্রহণের দেড় মাস অর্থাৎ ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ অনেকেই এই নির্দেশনানুযায়ী এ কাজ করেননি। তাদের কারনে কাজের চাপ পড়ায় ভিড় হচ্ছে বেশি।’ 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান,‘ জন্ম নিবন্ধনে যে জটিলতা হচ্ছে; সেটি সার্ভারের কারণে হচ্ছে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধন প্রাপ্যদারদের কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে ক্লিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) পেতে বিলম্ব হচ্ছে।’  জন্ম নিবন্ধনে সহজিকরণের জন্য কিছু শর্ত শিথিল করা প্রয়োজন বলে তৃণমূল পর্যায়ের সংশ্লিষ্টরাসহ ভুক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।