কঙ্গো : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বর্ণ উত্তোলন

কঙ্গো : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বর্ণ উত্তোলন

কঙ্গো : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বর্ণ উত্তোলন

‘‘বনের পশুর মতো গুহায় প্রবেশ করি৷ ক্লান্ত হয়ে গেলে একটু বিশ্রাম নেই,’’ এভাবেই স্বর্ণ উঠাতে গিয়ে নিজের পরিশ্রমের কথা বলছিলেন আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর হার্ডি বিসিমওয়া৷২২ বছরের বিসিমওয়া দেশটির সাউথ কিভু প্রদেশের লুহিহির একটি খনিতে নানা কসরত করে স্বর্ণ আহরণের চেষ্টা করেন৷ মাথায় বসানো থাকে টর্চ লাইট৷ টর্চের আলোয় চলে খননকাজ৷ নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা৷ আর তাই থাকে জীবন হারানোর মারাত্মক ঝুঁকি৷  

কংঙ্গোর ওই অঞ্চলটিতে স্বর্ণ উত্তোলনের ইতিহাস বেশিদিনের নয়৷ দুই বছর আগে স্থানীয়রা সেখানে একটি পাহাড় আবিষ্কার করে, যে পাহাড়ের নীচে গুপ্তধনের মতোই স্বর্ণ লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়৷ এমন ধারণায় স্থানীয়রা ওই পাহাড়কে ঘিরে ভিড় করতে থাকে৷ কাঠ আর ত্রিপলের ঘর বানিয়ে এখানে প্রায় দুইশ পরিবার বাস করছে৷তবে স্বর্ণ উত্তোলনের বিষয়টি কিন্তু অত্যন্ত ভয়াবহ৷ কেননা, স্থানীয় গোত্রগুলোর মধ্যে এ খনিজ সম্পদ নিয়ে কোন্দল তো আছেই, সেই সাথে গুহায় শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে৷

স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা ডিডিয়ের সিযা-র  একজন প্রতিনিধি জানান, গত পাঁচ মাসে লুহিহিতে সাতজন মারা গেছেন৷ তাদের কেউ কেউ গোত্র-কোন্দলে আর কেউ কেউ গুহার ভেতরে শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন৷  এতসব ঝুঁকি আর নিরাপত্তাহীনতার পর খুব বেশিকিছু যে পাওয়া যাচ্ছে তা কিন্তু নয়৷ সর্বশেষ সাতবারের চেষ্টায় বিসিমওয়া একবার স্বর্ণ পেয়েছিলেন৷ তবে আশা ছাড়ছেন না তিনি৷ বলছেন, ‘‘ঈশ্বরের কৃপা থাকলে আমি স্বর্ণ পাবো, যা দিয়ে আমার পরিবারকে নিয়ে চলতে পারবো৷''

মধ্য-আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে স্বর্ণ ও কোবাল্টসহ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে৷  তারপরও দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নীচে৷ বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, তাদের দৈনিক আয় দুই ডলারেরও কম৷তাদেরই একজন বেরটিন মুরুহা৷ ১৯ বছরের মুরুহা ২০১৯ সালের স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি৷ তিনি এখন খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলনের চেষ্টা করেন৷ গত এক বছরের চেষ্টায় কিছুটা স্বর্ণ পেয়েছেন মুরুহা ৷ 

এদিকে এত পরিশ্রমের পর যে সোনা হাতে তারা পান তারও আবার ন্যায্য দাম পান না৷ স্থানীয় কারবারিদের কাছে প্রতি কেজি সোনা ৪৫০ ডলারে বিক্রি করতে হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় যা অনেক কম৷ আর কয়েক গ্রাম সোনার দাম যে কত কম তা সহজেই অনুমান করা যায়৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বর্ণ তোলায় নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন তাই খুব একটা হয় না৷লুহিহির বাসিন্দা সিফা নাশোবোলে বলেন, ‘‘আমরা যে আসলে স্বর্ণ উত্তোলন থেকে লাভবান হচ্ছি তা কিন্তু নয়৷ কারণ, সব স্বর্ণ চলে যায় কারবারিদের কাছে৷''

সূত্র : ডয়েচে ভেলে