স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস জনগণের আস্থা : প্রধান বিচারপতি

স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস জনগণের আস্থা : প্রধান বিচারপতি

স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস জনগণের আস্থা : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তার বিদায়ী সংবর্ধনায় দেয়া বক্তৃতায় বলেছেন, একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা।সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আজ বুধবার আয়োজিত এই সংবর্ধনায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন এবং আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা বক্তৃতা করেন।

প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় বলেন, ‘একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। সে আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তেমনি সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের তিনটি (আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ) অঙ্গের দায়িত্ব এবং স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিধৃত রয়েছে। তিনটি অঙ্গের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এটা আমাদের সংবিধানের সৌন্দর্য।’

তিনি বলেন, বিচারকদের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তেমনি সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এটা অর্জন সম্ভব কেবলমাত্র নিয়মিত অধ্যয়ন ও সময়মতো আইনানুগভাবে বিচারিক কাজ সম্পন্নকরণের মাধ্যমে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আমাদের বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। মামলার জট নিরসনে দেশের অধস্তন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। জেনে খুশি হয়েছি যে, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের পক্ষে সরকার কাজ শুরু করেছে। সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা বাস্তবতার নিরীখে অপরিহার্য। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজটি আরো স্বচ্ছ ও দ্রুততর হবে এবং জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূরীভূত হবে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার দেয়া বিভিন্ন রায় অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আপনার প্রদত্ত রায়ের গাইডলাইন কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুরক্ষা বর্ম হিসেবে কাজ করছে। নারীর নিরাপদ পরিবেশে কাজ করার এবং শিক্ষা গ্রহণের পথকে সুগম করছে যা সুদূরপ্রসারীভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার বিস্তারে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

এ ছাড়া ফতোয়ার নামে গ্রামের নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং তাদের মানবাধিকার লংঘন করে কতিপয় শাস্তি প্রদানের যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছিল আপনার রায়ে এ সকল বিচারবহির্ভূত কার্যকলাপকে আপনি অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে এ ধরনের শাস্তি প্রদানকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা যাবে বলে রায় প্রদান করেছেন। আপনার সে রায়ের মাধ্যমে গ্রামের নিরীহ মানুষের বিশেষত নারীর প্রতি সহিংসতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচার ও অধিকারহীনতা মানুষের জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আপনার নিরন্তর লড়াই বিচার বিভাগকে দেখিয়েছেন নতুন আলো।

দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বয়সসীমা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির কারণে আজ আপিল বিভাগের শেষ বিচারিক কর্মদিবসেই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র : বাসস