বর্ণিল সাজে সেজেছে পাবনার খ্রিষ্টানপল্লী

বর্ণিল সাজে সেজেছে পাবনার খ্রিষ্টানপল্লী

বর্ণিল সাজে সেজেছে পাবনার খ্রিষ্টানপল্লী

পাবনা প্রতিনিধি: খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ২৫ ডিসেম্বর। এ দিনটি খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল ভালোবাসা ও সোহাদ্য ভ্রার্তৃত্বপূর্ণ পরিবেশ। যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে বয়ে যায় খুশির বন্যা। খ্রিষ্টান পল্লীর রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বিশেষ বিশেষ স্থানগুলো ইতোমধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। গতবার করোনার কারণে উৎসবে ভাটা পড়লেও এবার উৎসব আমেজে মেতেছেন এখানকার মানুষ।

বড়দিন উপলক্ষে পাবনার ২৩টি গির্জা এবং খ্রিষ্টান বাড়িগুলোতে সাজ সাজ রব। বাড়িগুলোর সামনে সাজানো হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ও পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। অতিথি আপ্যায়নের জন্য বাড়িতে বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে রকমারি পিঠা। গির্জা ও উপধর্মপল্লীগুলোকে সাজানো হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঝলমলে আলোকসজ্জায়। গির্জার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে করা হয়েছে। প্রাঙ্গণে কুঁড়েঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে রাখা হবে মাতা মেরির কোলে যিশুখ্রিষ্টের মূর্তি।

খ্রিষ্টানপল্লী ঘুরে দেখা যায়, বড়দিন আগমন উপলক্ষে ব্যস্ত রয়েছে রঙ-বে-রঙয়ের পোষাক তৈরিতে তেমনিভাবে ঘর-দোর সাজানো, বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ছাড়াও নির্মাণ করা হচ্ছে রং বেরংয়ের তোরণ।

পাবনার বাজারের পোশাকের দোকানগুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। নারী পুরুষ সকলের আগমন এখন বাজারে। যারা পাবনার বাইরে অর্থাৎ শহরে থাকে তারা আসতে শুরু করছে আপনজনদের কাছে। গীর্জাগুলোতে করা হচ্ছে ব্যাপক আলোকসজ্জা। সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হচ্ছে বেহস্তী আদলে তেরি করা হয় গোশালা ঘর।  যেখানে দু’হাজার বছর আগে জন্ম নিয়েছিলো যীশুখ্রীষ্ট। যুবকরা বাঁশ-কাবারী ও বিচালি দিয়ে গোশালা তৈরি করেছে। তাছাড়া মা মারিয়ার আবাসস্থলটি তৈরী করা হয়েছে পাথরের টুকরা দিয়ে। সাজানো হয়েছে নানা রঙ্গ। এদিকে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর ) সারাদিন খ্রিষ্টানদের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নানা রকমের পিঠা তৈরির ধুম। এদিন সন্ধ্যার পর যুবক ছেলেরা সারারাত জেগে আনন্দ উল্লাস করে এই রাতকে জাগনি রাত বলা হয়। ২৪ তারিখ রাত ১২ টার পরে কেক কেটে যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। সব মিলিয়ে খ্রিষ্টান পল্লীর গোটা এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

পাবনা ব্যপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক উত্তম দাস জানান, বড়দিনকে ঘিরে পাবনা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এসব আয়োজনের মধ্যে রয়েছে নগর কীর্তন, বড়দিনের উপাসনা, কেক কাটা, পিঠা পর্ব, প্রীতিভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমরা আশা করি প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা এবারের বড়দিনের উৎসব উদযাপন করতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, নবরাজ খ্রিস্টকে গ্রহণ করতে বড়দিনের নয় দিন আগে থেকে নভেনা খ্রিষ্ট যাগ বা পাপস্বীকার পর্ব চলছে। আমাদের মূল অনুষ্ঠান ২৪ ডিসেম্বর রাত ৯টায় উপসনা আরম্ভ হবে। বড়দিনের কীর্তনের (ক্যারল) মধ্যে দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।

পাবনা ব্যপ্টিস্ট চার্চের পালক মি. ইসহাক সরকার বড়দিনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান, প্রতি বছরের মত এবারোও বড়দিন পালন করবো আশা করছি। এদিনকে ঘিরে আলোকসজ্জা করেছে স্থানীয়রা। আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবসময় সরকার আমাদের পাশে থাকে। পুলিশ প্রশাসন বড়দিনের সময় বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।

তিনি বলেন, যিশু খ্রিষ্টের বাণী জগতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক। সবার মাঝে মিলন ভার্তৃত্ব বজায় থাকুক। ২৫ ডিসেম্বর আমাদের প্রভু যিশু খ্রিষ্টের বেথেলহেমের গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাই এ দিনটিকে আমরা বড়দিন হিসেবে উদযাপন করি। তিনি আরো বলেন,আমাদের দেশে, সমাজে সমাজে, মানুষে মানুষে যাতে কোনো বিভেদ, অশান্তি না থাকে, শান্তি বিরাজ করে সে বারতা ও প্রত্যাশা নিয়ে এবারের বড়দিন উদযাপন করবো।

পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জানান, আসন্ন বড়দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে বড়দিন উদযাপন করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল চার্চে, পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকি পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি আগাম তথ্য পাওয়ার জন্য সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।

জেলা পুলিশের তথ্য মতে, পাবনায় এবার ২৩টি গীর্জায় বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বড়দিনের উৎসব ছুঁয়ে যাক সবার প্রাণ, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।