করোনা নাকি সর্দিজ্বর?

করোনা নাকি সর্দিজ্বর?

করোনা নাকি সর্দিজ্বর?

সাধারণ ঠাণ্ডাজ্বর, ‘ফ্লু’ নাকি কোভিড-১৯! কিভাবে বুঝবেন? লক্ষণগুলোতো প্রায় এক। গলাব্যথা বা অস্বস্তি, নাক দিয়ে পানি আসা, পেশি বা শরীর ব্যথা এই উপসর্গগুলো দুই বছর আগেও আজকের মতো আতঙ্কের ছিল না। কারণ ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্তও এগুলো ছিল মৌসুমি সর্দিজ্বরের সাধারণ উপসর্গ, যা সারতে ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ত না।তবে এখন এগুলোই প্রাণঘাতী মহামারী কোভিড-১৯-এর উপসর্গ।

তাই বলে মৌসুমি সর্দিজ্বর কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তাই এই সমস্যাগুলোতে যখন কেউ ভুগছে, তখন তা কোভিড-১৯ নাকি মৌসুমি সর্দিজ্বর তা নিয়ে দোটানা রয়েই যায়।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে ‘এপিডিমিওলজিস্ট’ এবং ‘ডেট্রয়েট হেল্থ ডিপার্টমেন্ট’র সাবেক কার্যনির্বাহী পরিচালক ডা: আব্দুল আল-সাইদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নয়া ধরন ওমিক্রনের তাণ্ডব বৃদ্ধির প্রভাবে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা আবার বাড়ছে দ্রুত গতিতে। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের এই নয়া ধরনের তীব্রতা কম। তবে মনে রাখতে হবে, টিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করে।’

টিকার বুস্টার ডোজ নিলে তার করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করে তাকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করার ক্ষমতা বাড়বে প্রতিবার। তাই বলে সংক্রমণকে হেলাফেলা করার অবকাশ নেই।তিনি আরো বলেন, ‘একক ব্যক্তির ওপর ওমিক্রনের প্রভাব হয়তো মৃদু, তবে পুরো জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হলে এই মৃদু ধরনই গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের চিল্ড্রেনস ন্যাশনাল হসপিটালের ফিজিশিয়ান ডা: সারাহ অ্যাশ কম্বস বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের অনেক লক্ষণ মৌসুমি সর্দিজ্বরের মতোই। তাই উপসর্গ কী ইঙ্গিত করছে তা জানার জন্য পরীক্ষা করাতে হবে।

যে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির তথ্যানুসারে ডা: আল-সাইদ জানান, জ্বর, অবসাদ, শরীরব্যথা, গলাব্যথা, দম বন্ধ হয়ে আসা, বমি, ডায়রিয়া এই সবই কোভিড-১৯ আর ‘ফ্লু’ বা মৌসুমি সর্দিজ্বরের লক্ষণ।এর সাথে মাথাব্যথা ও ড্রাই কফ থাকলে সন্দেহ কোভিড-১৯-এর দিকে মোড় নিতে শুরু করে।স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ যা কোভিডের ইঙ্গিত দেয়।

পরামর্শ দিতে গিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘তবে এই দুই উপসর্গ করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের সংক্রমণে কম দেখা যাচ্ছে। যারা প্রচণ্ড বুকব্যথা অনুভব করছেন, সাথে আছে ড্রাই কফ, যা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছেন, তাদের দ্রুত চিকিৎকের পরামর্শ নেয়া উচিত।’

পরীক্ষা করানোর সঠিক সময়

ডা: আল-সাইদ বলেন, ‘সন্দেহ হলে পরীক্ষা করানো উচিত। তবে পরীক্ষা কখন করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন কেউ উপসর্গ অনুভব করছে তখনই পরীক্ষা করাতে হবে। আগে না, পরেও না।’‘যারা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পরও উপসর্গ টের পাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য হলো শরীরে ভাইরাসের মাত্রা এখনো কম, যা পরীক্ষায় ধরা পড়ার মতো নয়। সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এমন সন্দেহ থাকলে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, দেখুন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় কিনা। তারপর পরীক্ষা করান।’‘আর পরীক্ষা নেগেটিভ আসা মানেই যে আপনার কোভিড হয়নি তা ভেবে নিশ্চিন্ত হওয়াটা ভুল হবে।’

শিশুদের কী হবে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হয়েছে বহুদিন পর। সব বয়সের শিক্ষার্থীরাই এখন কমবেশি স্কুল, কলেজ, কোচিংয়ে যাচ্ছে। আবার শীতের এই আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।‘এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তাকে কোভিড-১৯ মনে করে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে, বলেন ডা: সারাহ অ্যাশ কম্বস।তিনি আরো বলেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ শিশুদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো করেই। শিশুদের জন্য এখনো টিকার অনুমোদন হয়নি। তাই সর্বোচ্চ সচেতনতাই তাদের জন্য একমাত্র উপায়।’

‘টেস্ট করানো ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র দেরি করা চলবে না। এখন আমরা ভাইরাসকে রুখতে জানি। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে শিশুকে মাস্ক পরাতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আর করোনাভাইরাসের নিয়ত পরিবর্তনশীল ধরন ও তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে।’ ইন্টারনেট।