ইবির হল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

ইবির হল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

ইবির হল কর্মকর্তা সুজল কুমার অধিকারী

ইবি প্রতিনিধি:আবাসিক হলে নিজের কর্তৃত্ব বিস্তারে বেপরোয়া আচরণের কারণে শিক্ষার্থীদের বিরক্তি ও ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ রাসেল হলের শাখা কর্মকর্তা সুজল কুমার অধিকারী। তার বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো সিট বরাদ্দ দেওয়া, হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি ও ছাত্রদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণসহ বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার রিপন রায় নামের ভূক্তভোগী এক আবাসিক শিক্ষার্থী তার সাথে করা অসৌজন্যমূলক আচরণের বিচার চেয়ে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টর বরাবর তিন পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরতে থাকেন হলটির অন্য আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

ভূক্তভোগী ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রিপন রায় হলের হলটির ১০২ নম্বর কক্ষে থাকেন। এটি হলের গণরুম। গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলে সিট দেওয়ার আগে ওই কক্ষে নতুন কোন শিক্ষার্থীকে তোলা হবে না বলে জানিয়েছিল হল প্রশাসন। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকেলে হলের গণরুমে নতুন করে এক ছাত্রকে তুলতে আসেন কর্মকর্তা সুজল। তখন ওই কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্টের সাথে কথা না বলে ওই ছাত্রকে কক্ষে তুলতে অসম্মতি জানায়। ফলে কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন তিনি।

এরপর আবারো ফিরে এসে কক্ষে থাকা হিটার দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে এটি কে ব্যবহার করে জিজ্ঞেস করেন। তখন কক্ষে থাকা হিন্দু শিক্ষার্থীরা জানান তারা ব্রত পালন করতে মাসে দুইবার নিরামিষ রান্নার জন্য হিটার ব্যবহার করেন। কক্ষে হিটার থাকায় সুজল হুমকির সুরে কথা বললে ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে উচ্চবাচ্য হয়। একপর্যায়ে সুজল রিপনকে থাপ্পড় দেওয়ার হুমকি দেয়।

এবিষয়ে রিপন অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, ওই কর্মকর্তা উচ্চস্বরে বলেন, ‘এই ছেলে তোমাকে থাপড়াইয়া সোজা করে দিবো। আমি হল প্রসাশন, তুমি জানো আমি কী করতে পারি?’ এসময় ওই কর্মকর্তা গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ধরণের অপমানসূচক কথা বলেন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। এছাড়া ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সমসয় শিক্ষার্থীদের নানাভাবে অপমান ও হেনস্থা করার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

ভূক্তভোগী রিপন রায় বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা এর আগেও আমাকে বিভিন্নসময় অপমান করেছে। অন্য শিক্ষার্থীদের সাথেও তিনি এমন আচরণ করেন। সেইদিন হলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও জুনিয়রদের সামনে আমাকে থাপড়াতে চান। এ ছাড়াও আমরা নিজেদেরকে গরীব দাবি করে তার কাছে সিট চাইতে আসি এমন বিভিন্ন ধরণের অপমনসূচক কথা বলেছেন, যেটা আমার অস্তিত্বকে আঘাত করেছে। আমি এটা মেনে নিতে পারিনি।  তাই লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আশা করি প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।’

এদিকে বুধবার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস ও কমেন্টে সুজলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করেন হলটির বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী। অনেকে হলটি থেকে তার পদত্যাগও দাবি করেছেন। শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘শেখ রাসেল হলের শতকরা ৫ জন শিক্ষার্থীও ওনার আচরণ পছন্দ করে না।’ মালেক তালহা লিখেছেন, ‘সুজলের কথা শুনে মনে হয় আমরা ওর বাসায় ভাড়া থাকি।’ সৌমিক লিখেছেন ‘ও আসলেই একটা বেয়াদব। এর আগেও এমন করেছে।’ পারভেজ নামের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, ‘এনারা নিজেদেরকে ভিসির উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তা ভাবে।’ ইমরান লিখেছেন, ‘তাকে হলের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে একটি বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষায় এক পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোন ও হেডফোন সরবরাহ করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলো ভ্রাম্যমান আদালত। বিষয় গুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে কর্মকর্তা হয়ে আবাসিক শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ কোয়ার্টারে পরিবারসহ অবস্থান করা, হলের ডায়নিংয়ে কয়েকজন কর্মচারীকে ফ্রি খাওয়ানোর অভিযোগও রয়েছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা সুজল কুমার অধীকারী বলেন, ‘হিটার দেখে রাগ করেছিলাম। কিন্তু মারধরের কোন বিষয় বলিনি। ও এমন কিছু বলে থাকলে মিথ্যা বলেছে।’

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভূক্তভোগী ছাত্রের সাথে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টা যেহেতু প্রশাসন পর্যন্ত গিয়েছে। শনিবার তাদের নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি ভূক্তভোগীর মাধ্যমে শুনেছি। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। ওই ছাত্রকে অফিসে অভিযোগপত্রটি জমা দিতে বলেছি। শনিবার প্রভোস্টের সাথে বসবো।’