ইউক্রেনে মস্কোপন্থী এমপিকে ক্ষমতায় বসাতে পরিকল্পনা করছে রাশিয়া : ব্রিটেন

ইউক্রেনে মস্কোপন্থী এমপিকে ক্ষমতায় বসাতে পরিকল্পনা করছে রাশিয়া :  ব্রিটেন

ইউক্রেনে মস্কোপন্থী এমপিকে ক্ষমতায় বসাতে পরিকল্পনা করছে রাশিয়া : ব্রিটেন

যুক্তরাজ্য অভিযোগ করেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে একজন মস্কোপন্থী ব্যক্তিকে ইউক্রেনের সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা করছে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যক্তিটির নামও প্রকাশ করেছে - যা বেশ অস্বাভাবিক এক ঘটনা। বলা হচ্ছে সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ইয়েভেন মুরায়েভই হচ্ছেন ক্রেমলিনের পছন্দের সেই ব্যক্তি - যাকে রাশিয়া ইউক্রেনে ক্ষমতায় বসাতে চায়।রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে - এমন কথা মস্কো অস্বীকার করেছে।

মি. পুতিন অভিযানের কথা অস্বীকার করলেও দাবি করছেন যে তাকে পশ্চিমা দেশগুলোর এ গ্যারান্টি দিতে হবে যে ইউক্রেনকে কখনোই নেটোর সদস্য করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্র এরকম কোন অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করেছে।কিন্তু পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ২০২২ সালের প্রথম দিকেই কোন এক সময় রাশিয়া অভিযান চালাতে পারে।

কে এই মুরায়েভ?

মি. মুরায়েভ একটি সংবাদমাধ্যমের মালিক, এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে তার পার্টি ৫%এর কম ভোট পাওয়ায় তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে তার সদস্যপদ হারান।তিনি অবশ্য নিজেই অবজারভার পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, তার কাছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরকে 'বিভ্রান্ত' বলে মনে হয়েছে।

"এসব কথা খুব একটা যৌক্তিক নয়। আমাকে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে আমার পিতার প্রতিষ্ঠানের যে অর্থ আছে - তাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে," বলেন মি. মুরায়েভ।

কিন্তু যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টাইকো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রাশিয়া একজন মস্কো-পন্থী নেতাকে ইউক্রেনের ক্ষমতায় বসাতে চাইছে।ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর আরো চারজন ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ করেছে যারা তাদের ভাষায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখেন।

ইউক্রেনে আমেরিকান অস্ত্রের চালান পৌঁছেছে

রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলার জন্য ইউক্রেনকে ৯০ টন পরিমাণ সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনকে ২০ কোটি ডলারের যে নতুন সামারিক সহায়তা দেবার অঙ্গীকার করেছিলেন - এটি হচ্ছে তার আওতায় পাঠানো প্রথম চালান।কিয়েভে মার্কিন দূতাবাস বলছে, এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সামনের কাতারের সদস্যদের জন্য গোলাবারুদ - যা রাশিয়া কোন অভিযান চালালে তার মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে।

ইউক্রেনে আমেরিকান অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর জন্য গত কয়েকদিনে এস্তোনিয়া, লাতভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া যে প্রস্তাব করেছিল তা-ও অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।রুশ-মার্কিন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভের মধ্যে জেনেভায় একটি বৈঠক হয়েছে - তবে তাতে কোন ফল হয়নি।

ভ্লাদিমির পুতিন কী চান?

রুশ প্রেসিডেন্ট বহু দিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গরবাচেভের কাছে একটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে নেটো জোটকে পূর্ব দিকে আর সম্প্রসারণ করা হবে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি।

সে সময় থেকে এ পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা তার প্রভাব-বলয়ের অংশ ছিল - এমন অনেক পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশ নেটো জোটের সদস্য হয়েছে। এর মধ্যে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাৎভিয়া এবং এস্তোনিয়ার সরাসরি সীমান্ত রয়েছে রাশিয়ার সাথে।রাশিয়া মনে করে, এর ফলে তাদের সীমান্তের কাছে নেটোর সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রের উপস্থিতি তার নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে।

মি. পুতিন চান, পশ্চিমা দেশগুলোকে এ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে ইউক্রেনকে কখনো নেটো সদস্য করা হবে না, এবং পূর্ব ইউরোপে নেটোর অস্ত্রশস্ত্র দেয়া ও সামরিক মহড়া চালানো বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোন অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করেছে।এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হলে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়। এর পর থেকে পূর্ব ইউক্রেনে রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহীদের সাথে ইউক্রেনের বাহিনীর যুদ্ধ চলছে।

সূত্র : বিবিসি