পরিশ্রমী নারী ইউপি সদস্য ববিতা আজো মাটি কেটে সংসার চালান

পরিশ্রমী নারী ইউপি সদস্য ববিতা আজো মাটি কেটে সংসার চালান

পরিশ্রমী নারী ইউপি সদস্য ববিতা আজো মাটি কেটে সংসার চালান

‘নিজের কাজ নিজে করি-এতে লজ্জার কিছু নেই। জীবিকার অন্বেষায় কাজ তো করতেই হবে। ইউপি সদস্য হয়েছি বলে কী লাটে ওঠে গেছি। পেটের জ্বালা রড় জ্বালা। বসে থাকলে তো আর সংসার চলে না।’ পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য ববিতা খাতুন সরল সোজাভাবে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।

এই সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে গত ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ববিতা খাতুন নামের এ শ্রমজীবী নারী বিপুল ভোটে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মূলগ্রাম ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের জায়দুল ইসলামের স্ত্রী। নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিমধ্যে তিনি শপথ গ্রহণ শেষে পরিষদের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ইউনিয়নের বিভিন্ন  গ্রামে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর অধিদপ্তরের পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষন (আরইআর এম পি-৩) মাটি কাটা কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ ধরে এ কাজ করে আসছেন।

সংসার জীবনে দুঃখী এ নারী অনেক আগেই তার স্বামী তাকে ত্যাগ করে অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা সংসার  পেতেছেন। পরিবারে তার ১৮ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে সন্তান আর এক ছোট বোন রয়েছে। ছেলেকে বিয়ে  দেয়ার পরে সেও মায়ের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তিনি ইউপি সদস্য হয়েও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ২৫০ টাকা পারিশ্রমিকে ৩ বছরের চুক্তিতে শ্রম বিক্রি করে চলেছেন।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য ববিতা খাতুন বলেন,আমার মা একবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। পরের বার নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে হেরে যাই। এবার আবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জনগণ আমাকে বিপুল  ভোটে নির্বাচিত করেন। নির্বাচনে আমি কোন টাকা পয়সা খরচ করতে পারিনি। গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় সবাই এক জোট হয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছি বলে অনেক বড় কিছু হয়ে  গেছি সেটা আমি মনে করি না। জীবিকার জন্য আমাকে কাজ করতেই হবে।

তিনি আরো বলেন, এলাকার মানুষের প্রয়োজন হলে এবং পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান সাহেব খবর দিলে তখন আমি পরিষদে যাই। কাজ শেষ হলে আবার এসে কাজে যোগদান করি। মানুষ আমাকে অনেক আশা আকাংখা নিয়ে ভোট দিয়েছে। আমি গরীব, অসহায় ও নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ হামজু বলেন, মেয়েটা আমাদের এলাকার এবং সে একজন পরিশ্রমী নারী। গত নির্বাচনে এলাকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী বেশ টাকা ওয়ালা শক্ত প্রার্থী থাকার পরেও মানুষ তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন। সে গ্রামেই ষ্টলে চা বিক্রি করতো। দরিদ্রতার কারণে সে এখনও মাটি কাটার কাজ করে। আমরাও পরিষদের পক্ষ থেকে বলেছি তুমি তোমার কর্ম করো, বিশেষ প্রয়োজনে কিংবা দিনে একবার পরিষদে গিয়ে ঘুরে এসো।

এ বিষয়ে মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রাশেদুল ইসলাম বকুল বলেন, বর্তমানে আমার পরিষদের  সে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি বলেছিলাম মাটি কাটার কাজ না করতে। সে জবাবে বলেছে, যতদিন পর্যন্ত আমি পরিষদ থেকে কোন বেতন/ভাতা না পাবো ততদিন পর্যন্ত আমি এই কাজ করবো। যেহেতু  সে একজন হতদরিদ্র কর্মঠ মেয়ে তাই আমি তাকে বলেছি তোমার যেকোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।