চার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেস্ট সিরিজেও হারাতে পারে বাংলাদেশ

চার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেস্ট সিরিজেও হারাতে পারে বাংলাদেশ

চার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেস্ট সিরিজেও হারাতে পারে বাংলাদেশ

ডারবানে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ। বৃহস্পতিবার বাঙলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে এই সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ।

ওয়ানডে ফরম্যাটে জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের মধ্যে যে স্বস্তির সুবাতাস বইছে সেটাকে কাজে লাগাবে বলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত।

তাসকিন আহমেদ, রাসেল ডমিঙ্গোর মুখেও আশাবাদী বক্তব্য শোনা গেছে এখনও পর্যন্ত।ডারবানে মাঠে নামার আগে পেস বোলিং আক্রমণ, দক্ষিণ আফ্রিকার এক ঝাঁক ক্রিকেটারের আইপিএল চলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত তবে বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্টের নজর প্রথম সেশনে খেলা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দিকে।

প্রথম সেশনেই ম্যাচ হাতে নিতে হবে

বাংলাদেশ দলের সাথে ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে আছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার, যিনি এর আগে ডারবানে অধিনায়কত্বও করেছেন বাংলাদেশের।তার মতে, টপ অর্ডারের ব্যাটিং আর স্ট্রাইক বোলারদের বোলিং টেস্ট ম্যাচের টোন সেট করে দেয়।

বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, "আগে ব্যাটিং করলে টপ অর্ডারের পারফরম্যান্স খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ানডে সিরিজের মত এখানেও নতুন বল সামলানো খুব তাৎপর্যপূর্ণ।"নতুন বলে উইকেট না হারালে পরের দিকে রান করা সহজ হয়ে যাবে বলেই মনে করেন হাবিবুল বাশার।তাই শুরুর ব্যাটিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আগে বোলিং করলেও একই বিষয় মনে রাখার কথা বলেন তিনি গণমাধ্যমে।"একইভাবে শুরুতে উইকেট নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন উইকেটে ব্যাটাররা উইকেটে সেট হয়ে গেলে বড় রান করা সহজ হয়ে যায়। তাই আগে বোলিং করি বা ব্যাটিং- প্রথম ইনিংস খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

বোলিং আক্রমণের ওপর নির্ভর করবে টেস্ট ম্যাচের ফল

মাউন্ট মঙ্গুইয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে জয় পায়, তাও আবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এই সাফল্য বাংলাদেশ দলকে বাড়তি প্রেরণা জোগাবে।

একইসাথে এই বার্তাও আছে দেশের বাইরে বিশেষত নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে বাংলাদেশ যদি ভালো করতে চায় সেক্ষেত্রে পেস বোলারদের পারফরমেন্স আবশ্যক।

মূলত ইবাদত হোসেনের স্পেলে ভর করেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছিল।বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসি মনে করেন, পেস বোলারদের জন্য ছন্দটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটা বাংলাদেশের আছে।তবে ব্যাটিংটা ভোগাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

"টেস্টে দেখা যায় এক ইনিংসে ভালো আরেক ইনিংসে ফ্লপ। এটা যাতে না হয়। এতে বোলারদের কষ্ট মাঠেই নষ্ট হবে।"৪৬ রান দিয়ে ৬টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

ওই বোলিং ফিগারের সামনে নিউজিল্যান্ড আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি সেই টেস্ট ম্যাচে, বাংলাদেশের সামনে মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য দিতে সক্ষম হয়েছিল তারা।এমনই একটা বা দুটি স্পেল একটা টেস্ট ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সবশেষ টেস্ট ম্যাচটিতেও অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্করা রীতিমতো পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের লাহোরের প্রথম ইনিংসে ধসিয়ে দিয়েছিল ২০০ থেকে ২৬৮ রানে আসতেই আট উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।জিম্বাবুয়ে বাদে বাংলাদেশ দেশের বাইরে তুলনামূলক কম শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল প্রায় ১৩ বছর আগে, এরপরে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের মতো দলগুলোর কাছে প্রতিবারই বড় ব্যবধানে হেরে এসেছে।

বিশ্লেষকদের মতে টেস্টের পেস বোলারদের অভাবটা বাংলাদেশকে খুব ভুগিয়েছে।মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০০৯ সালে, এখনো পর্যন্ত মাশরাফীর টেস্ট উইকেট সংখ্যাকে ছাড়াতে পারেননি কোনও ফাস্ট বোলার।

তিনি ৩৬ ম্যাচে ৭৮ উইকেট পেয়েছিলেন সেটাই এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট কোনও পেসারের।সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় প্রথম চারজনই স্পিনার- সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ রফিক।

ঘরের মাটিতে টেস্ট ম্যাচে পেসারদের অগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা একই সাথে মানসম্মত টেস্ট পেস বোলারের অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে এসব পরিসংখ্যানে।তবে এবাদত হোসেনের নিউজিল্যান্ডের পারফরম্যান্স, তাসকিন আহমেদের সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্স এবং শরিফুল ইসলামের শারীরিক ভাষা এই পেসত্রয়ী নিয়ে আশাবাদী করে তুলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসারীদের অনেককে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকান কোচদের ভূমিকা

বাংলাদেশের কোচিং স্টাফে অনেক দিন ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকান সাবেকদের আনাগোনা।নেইল ম্যাকেঞ্জি, অ্যাশওয়েল প্রিন্সরা ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকেই হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এবারে ফাস্ট বোলারদের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন অ্যালান ডোনাল্ড।পারিবারিক সমস্যার কারণে ওয়ানডে সিরিজ খেলে দেশে ফিরেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিব আল হাসান বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকান কোচদের ভূমিকা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভালো করার পেছনে।

"যেখানে কন্ডিশন আমাদের জন্য কঠিন সেখানে জয় পাওয়া বড় ব্যাপার। যেহেতু ওরা ওই দেশের ওই জায়গা সম্পর্কে ভালো আইডিয়া আছে তাই ওরা যা শেয়ার করেছে সেগুলো আমাদের কাজে লেগেছে। এই জিনিসগুলো অনেক সাহায্য করেছে। ওদের ড্রেসিংরুমের চিন্তাভাবনা আমরা জানতে পেরেছি।"

মিজ জেসিও মনে করেন, "প্রত্যেক ক্রিকেট দলের একটা দর্শন আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকার দর্শনটা সম্পর্কে এখন অবগত এই কোচদের কারণে। এটা মন বুঝতে সাহায্য করে প্রতিপক্ষ দলের।"

দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেটাররা আইপিএলে

দক্ষিণ আফ্রিকা তুলনামূলক দুর্বল একটি দল নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশের বিপক্ষে।মূলত যারা নিয়মিত টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে থাকেন তারা এখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে ভারতে আছেন।তাই ডিন এলগারের নেতৃত্বে এই দলে বেশ কজন নতুন মুখ আছে।মার্কো ইয়ানসেন, লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাদার মতো ক্রিকেটাররা নেই।এইডেন মারক্রাম, রাসি ফন ডার ডুসেনরাও আইপিএল খেলতে গেছেন।

এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ বলে মনে করছেন সাথিরা জাকির জেসি।তার মতে, "সাকিব আল হাসান যে প্রথম টেস্টে নেই এটাও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য প্লাস পয়েন্ট। আবার বাংলাদেশের জন্য সুযোগ বেশি কারণ ওদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই নেই।"

এর আগেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথে আইপিএল খেলতে ভারতে রওনা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার একদল ক্রিকেটার।দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ড থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "দেশের সিরিজ রেখে আইপিএলে খেলতে যাওয়াটা আদর্শ প্র্যাকটিস না, কিন্তু এটা এখন বাস্তবতা আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের পাইপলাইনের ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে, তারাও যথেষ্ট যোগ্য সেই প্রমাণ তারা মাঠে দেবেন।"

সূত্র :বিবিসি