পেঁয়াজে সয়লাব পাবনার হাটবাজার,আমদানি বন্ধের দাবি

পেঁয়াজে সয়লাব পাবনার হাটবাজার,আমদানি বন্ধের দাবি

পেঁয়াজে সয়লাব পাবনার হাটবাজার,আমদানি বন্ধের দাবি

পাবনার বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমী চারা পেঁয়াজ। তবে উৎপাদন ভালো হলেও পেঁয়াজের দাম না পেয়ে মন ভালো নেই কৃষকদের। তাদের অভিযোগ, বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তাতে ন্যায্যমূল্য তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না।

সরেজমিনে পাবনার সুজানগর, আতাইকুলা, বনগ্রাম হাট ঘুরে দেখা যায় নিজেদের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে হাটে বিক্রি করতে এনেছেন চাষিরা। হাটের চারিদিকে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি। পাইকার ব্যাপারিদের হাঁকডাকে বাজার সরগরম। তবে, ব্যপক আমদানিতে দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা। নিজেদের উৎপাদিত পেঁয়াজ সামনে নিয়ে বসে আছেন বিষন্ন মনে। দরদামের হাঁকাহাঁকিতেও নেই খুব বেশি আগ্রহ।

কৃষকরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করেছে মৌসুমী চারা পেঁয়াজ। গুণগত মানে সবচেয়ে ভালো পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না চাষিদের।

সুজানগর উপজেলার চরদুলাই গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ বলেন, চলতি ছয় বিঘা জমিতে তাহেরপুরী জাতের  পেঁয়াজ আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো ছিল, প্রতি বিঘায় গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ মণ পেঁয়াজের ফলন হয়েছে। সার, বীজ, তেলের দাম বাড়ায় প্রতি মণে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিমণ পেঁয়াজ কমপক্ষে ১,২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে, কৃষক লাভবান হবে। কিন্তু বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এতে খরচই উঠছে না।

সাঁথিয়ার বনগ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ প্রামাণিক বলেন, সরকার কৃষকের প্রতি সদয় না হলে আমাদের বড় ধরণের লোকসান গুণতে হবে। আশায় ছিলাম রমজানের সময় পেঁয়াজের উত্তোলন মৌসুম হওয়ায় এবার ভালো দাম পাবো। কিন্তু বাজারের যে পরিস্থিতি তাতে লাভ তো দূরের কথা আমাদের পথে বসার অবস্থা হবে। অন্ততঃ  পেঁয়াজের উত্তোলনের তিনমাস বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ রাখলে কৃষক সর্বসান্ত হওয়া থেকে বাঁচতো।

কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক ইমরুল কায়েস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন কৃষকের হাতে পেঁয়াজ থাকে তখন সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। আর কৃষকের পেঁয়াজ ফুরিয়ে গেলে পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ করে দেয়। এতে মজুদদার সিন্ডিকেট লাভবান হলেও, কৃষক, ভোক্তা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ বছর রমজানে পেঁয়াজের ভরা  মৌসুম। ফলে বাজারে সংকট হবে না। কাজেই, কৃষক বাঁচাতে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা দরকার।

কৃষিবিভাগ জানায়, উত্তরবঙ্গের মধ্যে পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা সুজানগর। গত বছর সুজানগরে ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজের আবাদ হলেও এবারে এই উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক সময়ে সার বীজ দিতে পারায় কৃষকেরা প্রতি বিঘা জমি থেকে উচ্চ ফলনশীল চারা থেকে ৮০ থেকে ৯০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ এবারে ঘরে তুলতে পারছে। উত্তোলনের সময় সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমে যায়। কিছুদিন পরে দাম একটু বাড়তে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, দেশের উৎপাদিত মোট পেঁয়াজে এক চতুর্থাংশ সরবরাহ হয় পাবনা থেকে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৫ হাজার ৫১৩ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মাঠের পরিস্থিতি বলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উৎপাদন বেশি হবে। উত্তোলন মৌসুমে বকেয়া পরিশোধের চাপ থাকায় একসাথে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন চাষীরা। ফলে দাম কম পান। আমরা জেলায় সরকারি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরির প্রস্তাবনা দিয়েছি। সংরক্ষণের সুযোগ থাকলে কৃষকের হাতে পেঁয়াজ থাকবে, ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।